শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা ছিল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০
  • ১৯৯ বার

করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা শারমিন হুসাইন (সাবরিনা আরিফ চৌধুরী) ও আরিফুল হক চৌধুরী দম্পতি। এমনকি করোনা পরিস্থিতি আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে ধরে নিয়েই এই পরিকল্পনা করেন তারা। তাদের টার্গেট ছিল কমপক্ষে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। তাদের এই পরিকল্পনার সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে নমুনা সংগ্রহ করার নাম করে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছেÑ এই অজুহাতে মোটা অঙ্কের অর্থ থোক বরাদ্দ নেওয়ার পরিকল্পনাও করছিল এই দম্পতি। এই ভয়াবহ জালিয়াতি করতে সাবরিনা নিজের চিকিৎসক ফেসভ্যালুকে কাজে লাগিয়েছেন। জালিয়াতির ঘটনায় আলোচিত এই দম্পতিকে দফায়

দফায় জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির কর্মকর্তারা তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, তদন্তের এই পর্যায়ে সাবরিনা-আরিফ দম্পতির দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছি। জালিয়াতির ক্ষেত্রে সাবরিনার চিকিৎসক ফেসভ্যালুকেই পুঁজি করেছিলেন তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সাবরিনা এই পরিচয় ব্যবহার করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। করোনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের প্রজেক্টে নমুনা সংগ্রহ করার যে পদ্ধতি সেটা তারা মানেননি। এমনকি নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে করোনা রোগীদের যে সার্ভিস দেওয়ার কথা সেটা তারা মানেননি। এক্ষেত্রে অপরাধমূলক কর্মকা-গুলো তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। যে বিষয়গুলো ডিপার্টমেন্টাল রেকর্ডে নিয়ে আসা দরকার সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে জানানো হবে।

তাদের এই জালিয়াতির সঙ্গে মন্ত্রণালয় বা অদিদপ্তরের কেউ জড়িত কিনা জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বলেন, এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারো না কারো সহায়তা পেয়েছে। সহায়তা না পেলে তারা এসব কাজ করতে পারতেন না।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় এই দম্পতির মালিকানাধীন ওভাল গ্রুপ খুব সহজেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ বাগিয়ে নেয়। এই সখ্যতার কারণেই এই দম্পতি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজির নামে নমুনা সংগ্রহের কাজের অনুমোদন বাগিয়ে নেন। নমুনার কাজ পেতে যে প্রপোজাল দিয়েছিল জেকেজি, সেই প্রপোজাল তৈরির ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অদিদপ্তরের কর্মকর্তারা সহায়তা করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের ভাগ ওই কর্মকর্তাদের পাওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ জানায়, জেকেজি হেলথ কেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০টি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় জেকেজি কর্মীদের ল্যাপটপে। এর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এই জালিয়াতির নেপথ্যে থেকে কাজ করেছেন জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা এবং প্রতিষ্ঠানরটির সিইও সাবরিনার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।

উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট থেকে ডা. সাবরিনাকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে ডেকে নেয় পুলিশ। পরে তাকে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ বলছে, অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিনই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনাকে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে বিনামূল্যে পরীক্ষার অনুমতি নিয়ে জাল-জালিয়াতি করছিল জেকেজি। গ্রেপ্তার হন আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানের আরও চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন পরিস্থিতিতে সাবরিনা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তিনি সরকারি কাজের অবসরে প্রতিষ্ঠানটিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com