কুমিল্লায় এএফসি হেলথ ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউশন হাসপাতালে ১৯ করোনা রোগীর চিকিৎসা বাবদ ১৩ লাখ টাকার একটি বিল কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের পরিচালকের কাছে দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই হাসপাতালের আইসিইউসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা বাবদ খরচের ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দাখিল করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে, করোনাকালীন কুমেক হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের আগে গত ১০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ফরটিস হাসপাতালে। এর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয় এবং ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। এসব রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাবদ কুমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে ১৩ লাখ টাকার একটি বিল দাখিল করে ফরটিস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা উপযোগী করে তুলতে আইসিইউসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিল পাঠায় হাসপাতালটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ হলে বিকালে সাংবাদিকরা ফরটিস হাসপাতালে ছুটে যান।
হাসপাতালটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কন্সালটেন্ট কার্ডিওলোজি ডা. সাঈদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, উল্লেখিত সময়ে তারা ১৯ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, এদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। ১৯ জনের চিকিৎসা, থাকা, ওষুধপত্র বাবদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকার বিল দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় থেকে এই হাসপাতালের একটি বড় কক্ষে ১০ বেডের আইসিইউ, ভেন্টিলেটার স্থাপনসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ৫ কোটিরও অধিক টাকা খরচ হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিল স্বাস্থ অধিদপ্তরে দাখিল করা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। হাসপাতালের জিএম অপারেশন তৌফিক হাসানও বলতে পারবেন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। পরে জিএম অপারেশন তৌফিক হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
২২ দিনে ১৯ জন করোনা রোগীর চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা এবং ওই হাসপাতালের আইসিইউসহ অন্যান্য স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা সরকারকে পরিশোধ করতে হলে প্রতি রোগীর জন্য খরচ দাঁড়ায় ২৯ লাখ টাকার ওপরে। যা অস্বাভাবিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, জেলা করোনা প্রতিরোধবিষয়ক মাল্টি সেক্টর কমিটি করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি ফরটিস হাসপালটিকে অধিগ্রহণ করেছিল। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের আগ পর্যন্ত ওই হাসপাতালটি ২২ দিনে ১৯ জন রোগীর সেবা দিয়েছে। রোগীদের ওষুধ, পথ্য ও চিকিৎসা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সেবা বাবদ ১২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৬ টাকা ও আইসিইউসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনা বাবদ ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিল দাখিল করেছে, যা একেবারেই অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য।