শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

বার কাউন্সিলের গাফিলতিতে জৌলুশ হারাচ্ছে আইনপেশা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০
  • ২৭৭ বার

প্রাচীন ভারতে বিচারপ্রার্থীরা সরাসরি রাজার কাছে অভিযোগ দায়ের করতেন। বিচারক ও বিচারপ্রার্থীর মধ্যে তৃতীয় কেউ থাকতেন না। রাজারা তাদের পরামর্শকদের অভিমতের ভিত্তিতে বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। বিচারকাজ পরিচালনায় বুদ্ধিবৃত্তিক মতামত প্রধান্য পেত। মুসলিম শাসনামলে বিচারপ্রার্থীর পক্ষে ওয়াকিল নিয়োগের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। কাজী বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। মুফতি ও হিন্দু পন্ডিতরা বিচারপ্রার্থীর পক্ষে মামলা পরিচালনায় আইজীবীর ভূমিকা পালন করতেন। কাজী ও মুফতি শরিয়াহ আইনের বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত হতেন।

ব্রিটিশ ভারতে মেয়র’স কোর্ট (১৭২৬) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইন পেশার সূচনা হয়। তখন উকিল হওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট যোগ্যতার বিধান (qualifications) ছিলো না। ১৭৭৪ সালে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হলে আইন পেশার সুনির্ধারিত কাঠামো ও বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। ১৭৯৩ সালে প্রবর্তিত কর্ণওয়ালিশ কোড অনুযায়ী পেশাদার উকিলের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার নিয়ম চালু হয়। সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করার জন্য সরকারি উকিল নিয়োগ দিতো। ব্যক্তিগত মামলা পরিচালনার জন্য সরকার উকিলদের সনদ প্রদান করত। ১৭৯৩ সালের প্রবিধান-৭ এর অধিনে সদর দেওয়ানী আদালতের উপর অধীনস্ত আদালত সমূহে আইন চর্চার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের উকিল হিসেবে সনদ দেয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৮১৪ সালের প্রবিধান ২৭ এর আওতায় জেলা আদালত সমূহকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আইন চর্চার জন্য উকিলদের সনদ প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়। তখন পর্যন্ত শুধু ব্রিটিশ ব্যারিস্টার, আইনজীবী ও এ্যাটর্নিরাই সুপ্রিম কোর্টে আইন চর্চার সুযোগ লাভ করতেন। ১৮৪৬ সালে লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারর্স এ্যক্টের মাধ্যমে এই বৈষম্যমূলক বিধানের বিলুপ্তি ঘটে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়। আইনজীবী তালিকাভূক্তির যোগ্যতা ও কার্যাবলীকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ১৮৫০ সালে ওকালতির পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ দেয়ার নিয়ম চালু হয়। লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারর্স এ্যক্ট, ১৮৭৬ অনুযায়ী উকিল, মোক্তার ও রাজস্ব আদায়কারী এজেন্টদের সনদ প্রদানের ক্ষমতা হাইকোর্টের উপর ন্যস্ত ছিল। উকিলরা অধস্তন সকল ফৌজদারী, দেওয়ানি ও রাজস্ব দপ্তরে; মোক্তাররা ফৌজদারি এবং রাজস্ব এজেন্টরা রাজস্ব দপ্তরে আইন ব্যাবসার সুযোগ লাভ করতেন। নারীরা তখনো এই পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন না । ১৯২৩ সালে লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার (ওইমেন) এ্যক্টের মাধ্যমে নারীদের আইনপেশায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হয়। উকিল, মোক্তার ও রাজস্ব এজেন্টের মধ্যকার পার্থক্যের বিলুপ্তি ঘটে ১৯৬৫ সালের লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল এ্যক্টের মাধ্যমে। এই আইনের অধীনে দুই-শ্রেণীর অ্যাডভোকেট তালিকাভূক্তির বিধান প্রবর্তন করা হয়। এক শ্রেণী হাইকোর্ট এবং অন্য শ্রেণী অধস্তন আদালত। অধস্তন আদালতের অ্যাডভোকেটরা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হাইকোর্টে অ্যাডভোকেট হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২-এর বিধান অনুসারে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল গঠিত হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইনজীবীদের লাইসেন্সিং ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। কাউন্সিল পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে কমিটির চেয়ারম্যন হিসেবে মনোনীত হন। বাকি ১৪ টি পদের সাতটিতে সদস্যরা আইনজীবীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। অন্য সাতটি পদে স্থানীয় আইনজীবীদের থেকে নির্বাচিত হন। কাজের গতিশীলার জন্য বার কাউন্সিলের রয়েছে পাঁচটি স্থায়ী কমিটি। আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের জন্য বার কাউন্সিল কয়েকটি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে। বার কাউন্সিলরের ২০১৮ সালের প্রাকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী আইনজীবীর সংখ্যা ৪৩,৮৮৪ এবং একই বছরে আরো ৭,৭৩২ জন তালিকাভূক্ত হন। সংখ্যার বিচারে ৫০ হাজারের বেশি হলেও ঠিক কতজন আইনজীবী সরাসরি আইন চর্চায় (প্র্যাকটিস) সম্পৃক্ত তা নির্ণয় করা কঠিন।

লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। ওই ব্যক্তিকে (১) বাংলাদেশের নাগরিক হবে (২) ২১ বছরের বেশি বয়সী হতে হবে (৩) (ক) বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে, অথবা (খ) বার কাউন্সিল স্বীকৃত বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ডিগ্রি থাকতে হবে, অথবা (গ) ব্যারিষ্টার এট ল ডিগ্রি থাকতে হবে। (৪) বার কাউন্সিল কর্তৃক অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। (৫) এনরোলমেন্ট ফি পরিশোধ করতে হবে।

লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স এন্ড বার কাউন্সিল রুলস, ১৯৭২-এর বিধান ৬০ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে অ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভূক্ত হওয়ার আগে অবশ্যই ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এডভোকেটের চেম্বারে ছয় মাস শিক্ষানবিশ কাল অতিক্রম করেতে হবে। একজন শিক্ষনবিশকে আইনজীবী হওয়ার জন্য তিন ধাপের (এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। ২০১২ সালে আইন সংশোধন হওয়ার আগে শুধু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ প্রদান করা হতো। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়ায় এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬১ সালের অ্যাডভোকেটস এ্যক্টের মাধ্যমে ভারতে ‘ইন্ডিয়ান বার কাউন্সিলের’ যাত্রা শুরু হয়। ভারতের আইনজীবী তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের দেশের প্রক্রিয়ায় অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তবে রাজ্যভেদে নিয়মের কিছুটা তারতম্য আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আইনজীবি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর ও মানসম্পন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে সনদ প্রদানের আগে আইনজীবীদের শপথ বাক্য পাঠ করানোর ব্যাতিক্রমি বিধান চালু রয়েছে।

দেশে দেশে আইনজীবীদের বিভিন্ন পোশাক নির্দিষ্ট রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে আইনজীবীদের প্রচলিত পোশাক ব্রিটিশদের দেখানো রেওয়াজ মতোই চলছে। ব্রিটিশরা রোমানদের থেকে প্রভাবিত হয়ে এটি গ্রহণ করেছে । কালো কোট, কালো গাউন, সাদা ব্যান্ড পরিধানের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে সব থেকে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যাটি হচ্ছে কালো কোট ও কালো গাউন আইনি অন্ধত্বের প্রতীক। অর্থাৎ আইনের চোখে সাদা কালো কোনো ভেদাভেদ নেই। বিজ্ঞ বিচারক তার বিচরকাজে আইন ও সুবিচেনার প্রেক্ষাপটে কোনো পক্ষের দিকে না তাকিয়ে রায় দিবেন। পোশাকের কালো রং আইনজীবীদের পরিচয় গোপন রাখার ইঙ্গিত করে। গলায় পরিহিত সাদা ব্যান্ড দিয়ে অন্ধকার থেকে শুভ্র সত্যকে বের করে আনা বুঝায়। গাউনের লম্বা হাতা দিয়ে আইনের ব্যাপ্তিকে বুঝানো হয়।

বার কাউন্সিল আইনজীবীদের সনদ প্রদানের দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করে এলেও গত কয়েক বছরে (২০১২ সালের পর) আইনজীবী তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ায় তীব্র জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজারের অধিক শিক্ষানবিশকে। দিন দিন বাড়ছে এই সংখ্যা। প্রক্রিয়ায় এই দীর্ঘসূত্রতার সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা প্রদান করলেও বার কাউন্সিল তা বাস্তবায়নে কোনো তৎপরতা দেখায়নি । বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম এ কে এম ফজলুল করিম (১৪ এডিসি ২৭১) মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলকে প্রতি বছর (ক্যালেন্ডার ইয়ার) অধঃস্তন আদালতের অ্যাডভোকেট অন্তর্ভূক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করে। এই নির্দেশনা প্রদানের পর গত চার বছরে (২০১৭-২০২০) বার কাউন্সিল মাত্র একটি তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এর ফলে এই পেশায় অন্তর্ভূক্ত হতে আগ্রহী শিক্ষানবিশদের অপেক্ষা ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। এক বছরেও অন্তর্ভূক্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করায় শিক্ষানবিশরা আন্দোলন শুরু করে (ঘেরাও, অনশন, বিক্ষোভ)। আন্দোলনের ফলে গত ফেব্রুয়ারিতে এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও প্রক্রিয়ার বাকি ধাপ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে তা অনিশ্চিত। ফলে এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় ১৩ হাজার (২০১৭ সালের চার হাজার ও ২০২০ সালের ৮ হাজারের অধিক) শিক্ষানবিশ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তা দেশের তরুণ ও মেধাবী আইন শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটদের আইন পেশা বিমুখ করে তুলছে।

এছাড়াও মানহীন প্রশ্নপত্র, পরীক্ষা খাতায় জালিয়াতি, পরীক্ষা খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ না থাকা সহ পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ অনেক পুরোনো।

সম্প্রতি ৩০ জুন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তারা এমসিকিউ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে তাদেরকে অ্যাডভোকেট সনদ প্রদানের দাবি জনায়। একই দাবিতে তারা সুপ্রিম কোর্ট বারের মূল ফটকে অবস্থান ধর্মঘট ও প্রেসক্লাবসহ সারাদেশে মানববন্ধন করে। এর ফলে একদিকে দাবির যৌক্তিকতা অন্যদিকে বার কাউন্সিলের ব্যার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা। তাদের আশংকা, মানহীন অন্তর্ভূক্তি প্রক্রিয়া এই পেশার ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। অপরদিকে প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা শিক্ষানবিশদের মনে পেশাগত জীবনের শুরুতেই এক ধরনের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করছে।

ঠিক কী কারণে এই ধরনের জটে থমকে আছে বার কাউন্সিলের তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়া কাউন্সিলের কর্তাব্যক্তিদের কাছে এর কোনো সদুত্তর নেই। এই জটিলতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে। বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতে, সময়য়োপযোগী সিদ্ধান্তের অভার, কাজে স্থবিরতা ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি এই সমস্যার মূল কারণ।

ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্র গঠনে আইনজীবীদের অবদান অনস্বীকার্য। এস পি গুপ্তা বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (১৯৮১ সাপ্লিমেন্ট, এস.সি.সি ৮৭) মামলায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ ও টেম্পল অব জাস্টিস বলে মন্তব্য করেন। এসরারুল হক বনাম মো: আমির হোসেন (৬৬ ডি.এল.আর, এ.ডি ১) মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের ‘অফিসার্স অব দ্যা কোর্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং দায়িত্বের বিশালতার কথা উদ্ধৃত করেন।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের বাইরেও আইনজীবীদের রয়েছে গৌরবোজ্জল অর্জন। নির্বহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের বিখ্যাত মাসদার হোসেন বনাম বাংলাদেশ মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম দীর্ঘ ২২ বছর সম্পূর্ণ ফি-বিহীন (pro-bono) পরিচালনা করেন। সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী (প্যারা-৫৩২, ৪১ ডি.এল.আর, এ.ডি, ১৬৫) মামলায় আইনজীবীদের উপস্থাপিত যুক্তিতর্কে মুগ্ধ হয়ে বিচারপতি এ টি এম আফজাল হোসেন আইনজীবীদের ‘বিজ্ঞ’ (learned) হিসেবে অভিহিত করার সার্থকতা বর্ণনা করেন । বিখ্যাত ত্রয়োদশ সংশোধনী (প্যারা-১১৪৯, ৬৪ ডি.এল.আর, এ.ডি ১৬৯) মামলায় জুনিয়র আইনজীবীদের অসামান্য পরিশ্রম ও গবেষণায় সন্তুষ্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাদের ২০ হাজার টাকা করে সম্মানী প্রদান করেন । বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী (৭১ ডি.এল.আর, এডি ৫২)মামলার দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত আইনজীবীদের সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। এসব দৃষ্টান্ত আইনজীবীদের দৃঢ়তা, একাগ্রতা ও বস্তুনিষ্টতার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধতার পরিচয় বহন করে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবী তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, মানসম্পন্ন ও যথাসময়ে সম্পন্ন করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় উদ্ভুত জটিলতা আইনের শাসনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার দায়ভার বার কাউন্সিলকেই নিতে হবে। জটিলতা নিরসনে বার কাউন্সিলকে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি বছরে (ক্যালেন্ডার ইয়ার) অ্যাডভোকেট তালিকাভূক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। সচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে যথাসময়ে তারা তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যাচ্ছে। পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার অংশ হিসেবে বার কাউন্সিলকে মানসম্পন্ন প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষা খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরদিকে শিক্ষানবিশদেরকে তাদের অযৌক্তিক দাবী (এমসিকিউ ফলাফলের ভিত্তিতে তালিকাভূক্তি) থেকে সরে আসতে হবে। দ্রুততম সময়ে মানসম্মত প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা সম্পন্ন করার যৌক্তিক দাবিতে আইন অঙ্গনের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com