সিলেটে করোনা সার্টিফিকেটের জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। টানা তিনদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তারা হাতে পান সার্টিফিকেট। তবে- এরই মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারণ- বন্যার মধ্যেও তারা রেজিস্ট্রেশন, নমুনা গ্রহণ ও সার্টিফিকেট নিতে আসতে হচ্ছে সিলেটে। সবখানেই নিজেরাই
উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। অবিলম্বে এই প্রক্রিয়াটিকে সহজ করার দাবি জানালেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- লোকবল সংকটের কারণে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে- ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর প্রবাসীদের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। প্রবাসীরা জানিয়েছেন- রেজিস্ট্রেশন, নমুনা দিতে এসে অনেকেই সংক্রমণ হতে পারেন।
বিদেশযাত্রী প্রবাসীদের করোনা সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার পর সিলেটে প্রবাসীদের নমুনা গ্রহণের পর সার্টিফিকেট প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তাদের নমুনা সংগ্রহ। সিলেট বিভাগের বিদেশযাত্রীদের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার একমাত্র স্থান হচ্ছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব। গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ল্যাবে পরীক্ষা হলেও প্রবাসীদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে নগরীর আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে স্থাপিত বুথে। রেজিস্ট্রেশন করতে হবে সিলেট সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে। রিপোর্টও প্রদান করা হচ্ছে এই কার্যালয় থেকে। রেজিস্ট্রেশন, নমুনা প্রদান ও রিপোর্ট গ্রহণের জন্য পরপর তিনদিন ব্যয় করতে হচ্ছে বিদেশযাত্রীদের। এ কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেক বৃদ্ধও বাধ্য হয়ে আসতে হচ্ছে। আবার অনেকেই পানি ডিঙ্গিয়ে তিনদিনই নির্ধারিত সময়ের আগে এসে উপস্থিত হতে হচ্ছে। ২৬শে জুলাই যাদের ফ্লাইট তাদের নিবন্ধন করা হয় বুধবার। গত বৃহস্পতিবার এই নিবন্ধনকারীরা আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে নমুনা জমা দেন। গতকাল সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে থেকে তারা নমুনা সংগ্রহ করেন। ২৭শে জুলাই যাদের ফ্লাইট তারা বৃহস্পতিবার নিবন্ধন করেন। গতকাল এদের নমুনা গ্রহণ ও শনিবার রিপোর্ট প্রদান করা হবে। এভাবে ফ্লাইট অনুসারে আগামী ১৫ দিনের নমুনা সংগ্রহের শিডিউল প্রকাশ করেছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। শিডিউল বিজ্ঞপ্তিতে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন- ‘বিদেশগামীরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদানের পর থেকে ফ্লাইটের পূর্ব পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।’ কিন্তু কোনোভাবে সেটি মানা সম্ভব হচ্ছে না প্রবাসীদের। কারণ- বিদেশ যাওয়ার আগেই তাদের করোনা টেস্ট করাতে হচ্ছে। এ কারণে তারা তিন দিনই কোয়ারেন্টিন ভেঙে সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য সিলেটে আসতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আশফাকুর রহমান জানিয়েছেন- এভাবে কোয়ারেন্টিন মানা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আবার অনেকেই দূরবর্তী স্থান থেকে আসতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তির তো শেষ নেই। বরং সময় নিয়ে যদি নিজ এলাকা থেকে সংগ্রহ ও সার্টিফিকেট বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে ভোগান্তি কম হতো। তোফায়েল আহমদ ও সুরুজ মিয়া নামের দুই প্রবাসী জানান- তারা বাড়ি থেকে পানি ডিঙিয়ে শহরে আসতে হচ্ছে। প্রথম দিন এসেছিলেন রেজিস্ট্রেশন করতে। এর পরের দিন নমুনা দিতে এবং সর্বশেষ রিপোর্ট নিতে। সুতরাং প্রতিদিনই ৫০ কিংবা ৬০ কিলোমিটার এলাকা পাড়ি দিয়ে তাদের শহরে আসতে হচ্ছে। এতে করে নমুনা প্রদানের আগেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি আরো সহজ করার দাবি করেন তারা। তবে- সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন- যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। তবে- দালাল কিংবা কারো দ্বারা কেউ যাতে প্রতারিত না হন সে কারণে তারা নিজেরা আসতে হচ্ছে। ওসমানী মেডিকেলের ল্যাবে যেহেতু বিদেশযাত্রী ছাড়া সাধারণ রোগীদেরও করোনা পরীক্ষা হচ্ছে তাই নমুনা সংগ্রহের দিনই তাদের রিপোর্ট দেয়া যাচ্ছে না। তবে একদিন পরই আমরা রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে- সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে প্রবাসীদের। এদিকে- গত বৃহস্পতিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে প্রবাসীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন প্রবাসীর করোনা পজেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক হিমাংশু লাল রায়।