শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

ব্যাংকের কু-ঋণ ক্রয়ে গঠিত হচ্ছে কোম্পানি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০
  • ২৪২ বার

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কু-ঋণ কিনে নেয়ার জন্য সরকারি পর্যায়ে একটি কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোম্পানিটির নামকরণ করা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন (বামকো)।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আমলা নির্ভর এই কোম্পানিকে ঋণখেলাপিদের প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ ও বিক্রি করার ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে। করপোরেশন চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন পদাধিকারবলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। করপোরেশনের সদস্য সংখ্যা হবে ১০ এবং পরিশোধিত মূলধন ৩ হাজার কোটি টাকা ও অনুমোদিত মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে করপোরেশন আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শিগগিরই এটির ওপর মতামতের (ভেটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর এই প্রথম কোনো কোম্পানিকে এই ধরনের ক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই কোম্পানি খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিল এবং পুনর্গঠন করে দিতে পারবে। যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণও কিনে নেয়ার ক্ষমতা থাকবে এই করপোরেশনের। এর আয় ও মুনাফা হবে সম্পূর্ণ করমুক্ত।

কাজ করতে পারবে কোনো খেলাপি প্রতিষ্ঠানের ‘রিসিভার’ হিসেবেও। করপোরেশনের সিইও নিয়োগ দেবে সরকার। পরিচালনা পর্ষদকে ‘সততা ও বিশ্বস্ততার’ শপথ নিতে হবে। আর এই কোম্পানিটি গঠন করা হবে একটি নতুন আইনের অধীনে। প্রস্তাবিত এই আইনের নামকরণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন ২০২০ (বিএএমসিও)। এই করপোরেশনকে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বর্ণনা করে আইনে বলা হয়েছে, এই করপোরেশনের একটি সীলমোহরও থাকবে এবং করপোরেশন মামলা দায়েরও করতে পারবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আইনের খসড়াটি গত মার্চ মাসেই চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এটি করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারপরও আমরা আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করেছি। এখন সেটি শিগগিরই মতামত নেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

পরিচালনা পর্ষদ : এ দিকে এই আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, করপোরেশনে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন পদাধিকার বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। তার অধীনে পর্ষদে সদস্য হিসেবে থাকবেন অর্থ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন সদস্য, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর মনোনীত একজন সদস্য, করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও একজন সদস্য হিসেবে থাকবেন। পর্ষদের মেয়াদ হবে ৩ বছর।

সূত্র জানায়, ২৯ পৃষ্ঠার এই আইনের ধারা রয়েছে ৪৬টি। এই ধারার মধ্যে আবার রয়েছে অনেকগুলো উপধারা। এমনই এক ধারা হচ্ছেÑ ২৪। এই ধারায় বামকোকে ‘নন-পারফর্মিং ঋণ’(খেলাপি ঋণ) আদায় ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কতিপয় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সেই ক্ষমতায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন কার্যকর হবার সঙ্গে সঙ্গে, অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নন-পারফর্মিং ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এই কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে-

ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবসায়ের যথাযথ দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বা কর্তৃত্ব গ্রহণ (টেকওভার)); ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ বা আংশিক বিক্রি বা লিজ দিতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় ননপারফর্মিং ঋণের পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন করতে পারবে। একই সাথে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক প্রদেয় বকেয়া নিষ্পত্তি করবে। এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে জামানতের দখল, সুরক্ষা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লিজ বা বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত ঋণের গুণগত মান বিবেচনা করে সম্পূর্ণ বা যেকোনো অংশ শেয়ারে রূপান্তরকরণ করতে পারবে করপোরেশন।

এই আইনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন’ অর্থ এই আইনের অধীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ননপারফর্মিং ‘জামানতি ঋণ বা অগ্রিম’ ক্রয়, বিক্রি, সংরক্ষণ, আদায়, পুনর্গঠন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পদের সিকিউরিটাইজেশন ও ব্যবস্থাপনা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার ও প্রতিস্থাপন (বিএমআরই), পরামর্শ প্রদান এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা মূলধন বা উদ্ভাবন মূলধন প্রদান ও ব্যবস্থাপনাকারী কোনো বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, করপোরেশন একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকবে এবং এই আইনের বিধান সাপেক্ষে এর স্থাবর ও অস্থাবর, উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করবার, অধিকারে রাখবার এবং হস্তান্তর করবার ক্ষমতা থাকবে এবং করপোরেশন এর নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে বা হ্রাস করার জন্য এই করপোরেশন যেকোনো দেশী বা বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করতে পারবে। এই করপোরেশনের তালিকাভুক্তি ছাড়া কোনো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কাজ করতে পারবে না। এর সদর দফতর ঢাকায় হবে কিন্তু শাখা অন্যান্য জায়গায় হতে পারে।

অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের কার্যাবলি : আইনের খসড়ায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- ঋণগ্রহীতা রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিএমআরই। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, দেউলিয়া বিষয়ক আইনের ১৯৯৭ (১৯৯৭ সনের ১০ নং আইন) ধারা ৭৪ অনুযায়ী সরকারি রিসিভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া করপোরেশন ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন, পোর্টফোলিও এবং সম্পদের পুনর্গঠন করতে পারবে। ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সম্পদ বা জামানত অর্জন, নিষ্পত্তিকরণ এবং ব্যবস্থাপনা দায়িত্বগ্রহণ করবে।

ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির দেউলিয়াগ্রস্ত অবস্থা চিহ্নিতকরণ ও সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইনের ধারা ৭ এ করপোরেশনের শেয়ার মূলধনের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশনের অনুমোদিত শেয়ার মূলধন হবে ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিটি ১০ (দশ) টাকা মূল্যের ৫০০ (পাঁচশত) কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত হবে; তবে শর্ত থাকে যে, সরকার, সময় সময় অনুমোদিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করতে পারবে। করপোরেশনের পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা, যা সরকারের অনুমোদনক্রমে সময় সময় বৃদ্ধি করা যাবে।

তহবিল বা ফান্ড গঠন ও পরিচালনা : এ সম্পর্কে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে করপোরেশন প্রয়োজনে ক্যাপিটাল মার্কেট হতে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল বা ফান্ড সংগ্রহ করতে পারবে।

করপোরেশন তহবিল বা ফান্ড গঠন বা বৃদ্ধিকল্পে, এক বা একাধিক, দেশী বা বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি বা ফান্ড/ফান্ড ম্যানেজারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, এরূপ দেশী বা বিদেশী বিনিয়োগকারী বা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি বা ফান্ড/ফান্ড ম্যানেজাররা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশনের অধীনে ‘জেনারেল পার্টনার’ হিসাবে বিবেচিত হবে এবং করপোরেশনের সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তহবিল বা ফান্ডের আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সহিত যৌথভাবে পরিচালনা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com