যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, এ নিয়ে উত্তেজনা ততই যেন বাড়ছে। রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাচ্ছেন, নাকি তাকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বাজিমাত করতে চলেছেন তা নিয়ে কৌতূহল সারা বিশ্বের। ফলে আসন্ন নির্বাচনের ফল কী হতে পারে তা নিয়ে এখন বিশ্লেষকদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ নির্বাচনে জিততে হলে দুই প্রার্থীকে শুধু ভোটারদের সরাসরি ভোটেই জিতলে হবে না, জিততে হবে মহাগুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টরাল কলেজ ভোটেও। সাধারণ ভোটারদের দ্বারা যিনি নির্বাচিত হন, সাধারণত ইলেক্টোরাল কলেজ তাকেই চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। তবে ২০০০ সালের নির্বাচনে এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছিল। ফলে এবারও ইলেক্টরাল ভোট নিয়ে সতর্ক রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবির। এখন থেকেই উভয় দল হিসেব-নিকেশ কষছে কীভাবে জয়ের জন্য ইলেক্টরাল কলেজের ভোট বাগানো যায়।
ইলেক্টরাল কলেজ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং এটি হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি পদ্ধতি। এর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই। আমেরিকান জনগণ আগামী ৩ নভেম্বর যে ভোটাভুটিতে অংশ নেবে, সেখানে তারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে
ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোট দেবে প্রার্থীর পার্টি মনোনীত এই কলেজ সদস্য বা নির্বাচক (ইলেক্টর) মনোনয়নের ব্যালটেও। এই নির্বাচকদের ব্যালটে পড়া টিক চিহ্নই
মূলত নির্বাচিত করবে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্টকে। অর্থাৎ সরাসরি প্রার্থীর ব্যালটে যে ভোট পড়বে সেটা তার জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি হলেও প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তাদের পার্টি থেকে নির্ধারিতসংখ্যক ইলেক্টর নির্বাচিত হওয়ার ভিত্তিতেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পদ্ধতিতে বিশেষ এই ধারা প্রবর্তন করা হয়েছে রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যার তারতম্যের জন্য। কারণ কেবল সরাসরি ভোটের হিসাবে যদি যেতে হতো তা হলে জনসংখ্যা অনেক বেশি এমন দু-চারটি রাজ্যের ভোটেই কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। এতে করে হয়তো ওই ব্যক্তির ওপর পুরো দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বীকৃতি থাকত না। ফলে তার জনম্যান্ডেট নিয়েও প্রশ্ন উঠত।
ইলেক্টরাল ভোট কীভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের নির্বাচন। সে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সাধারণ মানুষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তার পরও তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেননি। অথচ ভোট কম পেয়েও শুধু ইলেক্টরাল ভোটের জোরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এর আগে ২০০০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর পাঁচ লাখের বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারেননি।
মার্কিন ইলেক্টরাল কলেজের মোট ৫৩৮ সদস্য। এর মধ্যে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে গেলে তাকে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট পেতে হয়। জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ৫৫টি ইলেক্টরাল কলেজ ভোট আছে ক্যালিফোর্নিয়াতে। আবার আলাস্কা, মন্টানা, ভার্মন্ট, ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়া, ডেলাওয়ে রাজ্যের জনসংখ্যা সবচেয়ে কম বলে তাদের ইলেক্টরাল কলেজ ভোট ৩টি করে। দেশটির অন্য রাজ্যগুলোর ইলেক্টরের সংখ্যা ওয়াশিংটনে ১২, ওরিগনে ৭, নেভাদায় ৬, অ্যারিজোনায় ১১, উটাহয় ৬, ইদাহোতে ৪, হাওয়াইতে ৪, ইয়োমিংয়ে ৩, কলোরাডোতে ৯, নিউ মেক্সিকোয় ৫, নর্থ ও সাউথ ডেকোটায় ৩, ক্যানসাসে ৬, নেব্রাস্কায় ৩, ওকলাহোমায় ৭, টেস্কাসে ৩৮, লুইজিয়ানায় ৮, আরক্যানসাসে ৬, মিসৌরিতে ১০, আইওয়াতে ৬, মিনেসোটায় ১০, উইসকনসিনে ১০, ইলিনয়সে ২০, ইন্ডিয়ানাতে ১১, মিশিগানে ১৬, কেন্টাকিতে ৮, টেনিসিতে ১১, মিসিসিপিতে ৬, অ্যালাবামায় ৯, ফ্লোরিডায় ২৯, জর্জিয়ায় ১৬, সাউথ ক্যারোলিনায় ৯, নর্থ ক্যারোলিনায় ১৬, ভার্জিনিয়াতে ১৩, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে ৫, ওহিওতে ১৮, পেনসিলভেনিয়াতে ২০ ও নিউইয়র্কে ২৯।
এবিসি নিউজের জরিপ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২৫৩টি ও জো বাইডেন ২২৩টি রাজ্যে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে উভয় প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দোদুল্যমান পর্যায়ে আছে। যদিও সত্যতার নিরিখে এই জরিপকে নিশ্চিত ধরে নেওয়া বোকামি। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, বেশি ইলেক্টরাল ভোট থাকা রাজ্যগুলোর ফল নিজেদের দিকে আনতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবির যে আদাজল খেয়ে লাগবে তা নতুন করে না বললেও চলে।