২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর একটি অডিও ফাঁস হয়, যাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এক নারীর উদ্দেশে খুব বাজে মন্তব্য করতে শোনা যায়। সেই অডিওটি ছিল প্রায় বছর দশেক আগের। কিন্তু ফাঁস করা হয়েছিল গত নির্বাচনের প্রায় মাসখানেক আগে। এর পরও সেই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালনের পর আবার সামনে চলে এসেছে নির্বাচন; কিন্তু এই চার বছরেও ট্রাম্পের পিছু ছাড়েনি নানা কেলেঙ্কারি, বিতর্ক ও সমালোচনা।
ট্রাম্পের খতিয়ানে কী নেই? পর্নো তারকার সঙ্গে কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে এই চার বছরের মধ্যে তাকে অভিশংসনের মুখেও পড়তে হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত মন্তব্য, সমালোচিত পদক্ষেপ- এসবই চার বছর নিত্যসঙ্গী ছিল ট্রাম্পের। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে স্টর্মি ড্যানিয়েল (যার প্রকৃত নাম স্টিফেনি ক্লিফোর্ড) দাবি করেন, ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। ট্রাম্পের সঙ্গে তার যে যৌনসম্পর্ক ছিল, সে ব্যাপারে যেন তিনি চুপ থাকেন। শুধু ড্যানিয়েলই নন, একে একে ১৭ নারী অভিযোগ করেন- ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
এতো গেল শুধু যৌন কেলেঙ্কারির দিক। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে যা নিয়ে বেশি তোলপাড় হয়, তা হলো ২০১৬ সালে নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ। বলা হয়, রাশিয়া ট্রাম্পের পক্ষে নানা কূটকৌশল করেছে। এ নিয়ে সাবেক এফবিআইপ্রধান রবার্ট মুলারের নেতৃত্বে ২২ মাস তদন্তের পর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রায় হাফডজন কমকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প জো বাইডেন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে যেন তদন্তের জন্য চাপ দেন। ক্ষমতার এই অপব্যাপারের অভিযোগে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্প অভিশংসিত হন। যদিও সিনেটে গিয়ে তা বাতিল হয়। এ ছাড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগও সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।
এতো গেল পুরনো কাসুন্দি! নতুন এক বই লিখেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড। এখনো বইটি বাজারে আসেনি; এর আগেই একটি কপি সংবাদমাধ্যম বিসনেস ইসাইডারের হাতে এসেছে। সেই বইয়ে উঠে এসেছে ট্রাম্প সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে, করোনা ভাইরাস যে প্রাণঘাতী ও বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, ট্রাম্প তা আগে থেকেই জানতেন; কিন্তু নির্বাচনের আগে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন আতঙ্ক না ছড়ায়, তাই তিনি বিষয়টি চেপে গেছেন। এ খবর গত বৃহস্পতিবার বিশ্বগণমাধ্যমের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। শুরু থেকেই ট্রাম্প করোনা ভাইরাসকে হালকা করে দেখেছেন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসকে তিনি সর্দি-কাশির চেয়ের দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। আর সব দোষ চাপিয়েছেন চীনের ওপর। অথচ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই করোনা ভাইরাস প্রায় দুই লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এত বড় তথ্য গোপনের জবাব কি মার্কিনিরা ভোটের মাধ্যমে দেবেন?
এ ছাড়া ওই বইয়ে আরও একটি বিষয় বলা হয়েছে- সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার তোপ থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ট্রাম্পই রক্ষা করেছেন। যদিও এসব অভিযোগ ট্রাম্প সোজা অস্বীকার করেছেন। উল্টো সাংবাদিক ববের বিরুদ্ধে তিনি বলেছেন, তিনি (বব) যদি আগেই জানতেন যে, এই ভাইরাস এতো মারাত্মক, তা হলে এতদিন পর কেন বলছেন; আগে কেন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তিনি এসব তথ্য জানাননি!
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই মাসের কম সময় রয়েছে। এবার এমন এক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই মহামারী নিয়েও ট্রাম্প বিতর্কিত পদক্ষেপ নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি অভিযোগ তুলে সংস্থাটির তহবিলই বন্ধ করে দেন। যদিও বার্ষিক তহবিলের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে। একই সঙ্গে সংস্থাটির নেতৃত্বে যে টিকা কর্মসূচি চলছে, তাতেও যুুুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি। মহামারীর বিরুদ্ধে একাই লড়বে যুক্তরাষ্ট্র- এমন অবস্থান ট্রাম্প প্রশাসনের। তবে ট্রাম্পের এমন ভূমিকার সমালোচনা করে চলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এদিকে সব ধরনের জরিপে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। সর্বশেষ গত বুধবার প্রকাশিত জরিপেও দেখা গেছে বাইডেন এগিয়ে আছেন; কিন্তু জরিপ যে সব সময় সঠিক আভাস দেয় না, তা তো গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকেই বোঝা গেছে। এবার জরিপে ট্রাম্প পিছিয়ে থাকলেও মার্কিন বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, এই ব্যবধান তত কমবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে জরিপ যা-ই বলুক না কেন, ট্রাম্প যে কোনো সময় চমক দেখাতে সক্ষমÑ এ কথা ট্রাম্পবিরোধীরাও মানেন।