মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করলেও সিনিয়র-জুনিয়র মানা হয়নি বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলে। সেই সঙ্গে স্থান পাননি অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতা। এতে সংগঠনের ভেতরে-বাইরে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। অবশ্য সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলছেন, এতো বড় সংগঠনে অনেক যোগ্য নেতাকর্মী রয়েছেন। এখন সবাইকে তো আর একসঙ্গে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের সবার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত রয়েছে। ওই কমিটি প্রকাশ হলে ক্ষোভ আর থাকবে না।
প্রয়াত শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ছয় সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ২৮ জুলাই বাবু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর ওই পদে সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের নিজস্ব কোনো গঠনতন্ত্র নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হিসেবে নিজেদের মতো করে তিন বছর দাবি করেন নেতারা। সেই হিসাবে ২০১৬ সালে ঘোষিত আংশিক কমিটি তাদের পুরো মেয়াদ শেষ করেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। এবারও আংশিক কমিটি ঘোষণা করায় সংগঠনের একটি বড় অংশ এখনো নেতৃত্বের বাইরে রয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আবার বাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটিও কত বছর পর ঘোষণা করা হবে, তা কেউ জানেন না।
অভিযোগ রয়েছে, ঘোষিত কমিটিতে বিগত স্বেচ্ছাসেবক কমিটির ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাদের বাইরে রেখে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি বড় অংশকে দিয়ে কোরাম পূর্ণ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সিনিয়র-জুনিয়রের কোনো ক্রমান্বয় মানা হয়নি। লবিং-তদবিরে যারা এগিয়ে গেছেন তাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চুকে যুগ্ম সম্পাদক করা হলেও বিগত কমিটির সহসম্পাদক, সদস্যদের মধ্যে অনেকে পেয়েছেন সহসভাপতির পদ। আবার বেশ কয়েকজন নিষ্ক্রিয় নেতাকে পদায়ন করা হলেও বাদ পড়েছেন গত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান পিন্টু। অথচ রাজনৈতিক কারণে একাধিক মামলার আসামি, বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন এই নেতা।
ছাত্রদলের রাজিব-আকরাম কমিটির সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকে স্থান পেলেও নেই জ্যেষ্ঠতার বালাই। স্বেচ্ছাসেবক দলের ঘোষিত কমিটিতে সহসাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুজ্জামান শিমুলকে। তার জুনিয়র অর্থাৎ আগের কমিটির সহসভাপতি সরদার মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, দিপক কুমার বর্মণ প্রিন্সকেও রাখা হয়েছে সেই পদে। আবার তাদের নিচে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি নাজমুল হাসানকে করা হয়েছে সহদপ্তর সম্পাদক। কমিটিতে সহসাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ২৮ জনকে। এর মধ্যে বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সিনিয়র-জুনিয়র মানা হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কমিটির জেডআই কামাল, আলাউদ্দিন জুয়েল, এবিএম মুকুল, মাসুম বিল্লাহ, মুর্তজা বশির আপেলের মতো ত্যাগী আর সক্রিয় নেতাদের কোনো পদে না রাখায় সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীই ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, সংগঠনের সক্রিয় নেতাদের আগে মূল্যায়ন করে অন্য পদ ঘোষণা করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
এ দিকে কমিটি গঠনে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি অবলম্বন না করে অনেক জেলা কমিটির নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমানকে ফরিদপুর বিভাগীয় সহসভাপতি করা হয়েছে। খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তৈয়বুর রহমানকে করা হয়েছে খুলনা বিভাগীয় সহসভাপতি। ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন মাহমুদ ও শাহাবুদ্দিন মুন্নাকে সহসভাপতি করা হয়েছে। খুলনা মহানগর সহসাধারণ সম্পাদক জামাল হোসাইন তালুকদারকেও দেওয়া হয়েছে সহসভাপতির পদ। আবার নতুন সহসভাপতি আজহারুল হক মিলন, এবিএম পারভেজ রেজা, চৌধুরী ওয়াহিদুর রহমান চয়ন, সুলতান মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, আসফ কবির চৌধুরী শাশ্বত, ড. শরিফূল ইসলাম দুলু স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না। অন্যদিকে যুগ্ম সম্পাদক পদে আরিফুর রহমান আরিফ, আজগর হায়াত লিমন, আহসান হাবিব প্রান্ত ও জাকারিয়া আল মামুনকে নিয়ে আসা হয়েছে; যারা বিগত দিনে ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও পরবর্তীতে দলের কোথাও দেখা যায়নি তাদের।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী জানান, সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বাকি অংশে সংগঠনের সক্রিয় সব নেতাকর্মীই থাকবেন। খুব শিগগির কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে বলেও জানান তিনি।