এখনই সরকার পতনের কোনো আন্দোলন করতে চান না ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। এর ফলে এক স্বৈরাচারের বদলে আরেক স্বৈরাচার ক্ষমতায় বসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ডয়চে ভেলে বাংলার ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশো-তে নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা, সাম্প্রতিক ধর্ষণ মামলা, টেলিফোনে তার কথোপকথনে আড়িপাতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
নুর বলেন, ‘আমাকে যদি এই মুহূর্তে কেউ বলে সরকার পতনের আন্দোলন করো, আমি কিন্তু সেটা করবো না। কারণ হচ্ছে, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতারণা, দুর্নীতি, তাদের শাসনের নামে শোষণ আমরা দেখেছি। যদি একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে এবং ন্যূনতম কিছু শর্তের ভিত্তিতে একটা গণআন্দোলন হয়, যেমন ধরেন, দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে- এই ধরনের কিছু মৌলিক দাবি-দাওয়া যদি চূড়ান্ত হয়, সেই দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে আমরা এই অবৈধ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারি।’
যে সরকারকে অবৈধ বলছেন, সেই সরকার পতনের আন্দোলন করবেন না কেন, এর মাধ্যমে কি দরকষাকষির জায়গাটি শক্তিশালী করছেন কিনা- এমন প্রশ্নও ছিল নুরের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট- সবাই এই সরকারের পতন চায়। কিন্তু এই সরকারের পতন আমরা ঘটালাম, তার পরবর্তী যে সরকার আসবে তারা কী করবে? এই দেশের কী মৌলিক পরিবর্তন করবে? মৌলিক দাবির ভিত্তিতেই আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করবো। কারণ, আমরা একটা স্বৈরাচারকে সরিয়ে তো আরেকটা স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় বসাবো না। সে কারণে এই দেশের শাসন ক্ষমতায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।’
কী কী ধরনের মৌলিক পরিবর্তন তারা চান সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেন সম্প্রতি ধর্ষণ মামলায় নাম জড়ানো নুর। বলেন, ‘কেউ দুই তিনবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। গণমাধ্যমের উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে। স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আমরা এই ধরনের কিছু জনসম্পৃক্ত দাবি-দাওয়া ঠিক করছি। এর ভিত্তিতেই আমরা স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন করবো বা সরকার বিরোধী আন্দোলন করবো। …এই দাবি-দাওয়া চূড়ান্তের আগে আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করবো না।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের এই নেতা ও আরো কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। প্রথম মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুনকে। দ্বিতীয় মামলায় প্রধান আসামি একই সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ। এরই মধ্যে হাসান আল মামুনকে পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে নুর বলেন, ‘হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে ছাত্রী নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ (ধর্ষণের) আনতে পারেননি।’ নুরের দাবি, ছাত্রীর সাথে হাসান আল মামুনের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নুর জানান, দুই থেকে আড়াই মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রী ঢাকার বাইরে থেকে একবার তাকে ফোন দিয়েছিলেন। সমস্যায় পড়ার কথা বলে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ঢাকায় এসে বিস্তারিত বলবেন বললেও ওই ছাত্রী তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করেননি বলে দাবি করেন নুর। বলেন, ‘সে বলেছে, নীলক্ষেতে আমি তার সাথে বসেছিলাম বিষয়টি সমাধান করার জন্য। সেখানে নাকি বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাকে হুমকি দিয়েছিলাম।… আমি বলেছি, প্রমাণ করতে পারলে সমস্ত অভিযোগ মেনে নেবো। এই বিষয়ে সে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে নুর দাবি করেন, নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই তার সাথে যোগাযোগ করে। এমনকি আওয়ামী লীগও তার সাথে যোগাযোগ করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে জানান, এই মুহূর্তে কোনো দলেই যোগ দেবেন না, বরং বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইবেন। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, ৭১-এ তাদের যে ভূমিকা ছিল তা তিনি নিন্দনীয় মনে করেন।