ড. কামাল হোসেন আগামী ২৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিলে যোগ না দিলে গণফোরামের বিকল্প নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির একাংশের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। গতকাল বিকালে আরামবাগে ইডেন কমপ্লেক্স এলাকায় গণফোরাম কার্যালয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা জানান। অপরদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া জানান, আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্ট্রাল কনভেনিং কমিটির বৈঠক হবে। ড. কামাল হোসেন এ সভা ডেকেছেন। আবার ওইদিনই বেলা ১১টায় অপর অংশের নেতারা সারাদেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাইয়িদদের বিরোধের জেরে দল এখন ভাঙনের মুখে। কামাল হোসেনের অনুপস্থিতিতেই গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিতসভা করে ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলের ঘোষণা দেন মন্টু অংশের নেতারা। সভায় ১৪টি সাব-কমিটিও গঠন করা হয়। পাশাপাশি রেজা কিবরিয়াসহ চার নেতাকে বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন তারা। ওই বৈঠকে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, খান সিদ্দিকুর রহমান, আবদুল হাসিব চৌধুরী, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, হেলাল উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ড. কামাল হোসেন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। উনি গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা। আমি গণফোরামে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। দলে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এ কাউন্সিলে কামাল হোসেন যোগ দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আর কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন করবেন কাউন্সিলররা। যদি উনাকে নেতা নির্বাচন করা হয় আমরা বিনাদ্বিধায় তার সঙ্গে কাজ করব কর্মী হিসেবে। আর উনি যদি না আসেন তা হলে সারাদেশের কাউন্সিলররা বিকল্প নেতৃত্ব ঠিক করবেন। কারণ সংগঠন তো একটা জায়গায় বসে থাকতে পারে না।
গণফোরামের বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা দেশে গণতন্ত্র চর্চার কথা বলি। সে জন্য আমাদের দলে সেই কাজটি শুরু করতে চাই। আমরা আশা করব, গণফোরাম যে আদর্শ ও দর্শন নিয়ে ১৯৯৩ সালে ২৯ আগস্ট যাত্রা শুরু করেছিল, সেটি সম্মুন্নত রাখতে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সম্মেলনের জন্য কাজ করব। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গুলশানভিত্তিক সংগঠন পরিচালনা কিংবা ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংগঠনের কাজ মেনে নেওয়া হবে না।
আর গত মার্চে বিলুপ্ত কমিটির নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, বর্ধিতসভায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনকে আমরা বহিষ্কার করিনি। উনিও কাউকে বহিষ্কার করতে পারেন না বর্ধিতসভা ছাড়া। গণমাধ্যমকে বলতে চাই, আমরা গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলব, নিয়মতান্ত্রিক মোতাবেক চলব, সেই নিয়মতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রের বাইরে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো প্রশ্রয় আমরা দেব না। কর্তৃত্বাবাদী কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেব না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলব।
এদিকে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, গত বছরের ৫ মে গণফোরামের কমিটি ভেঙে দেন ড. কামাল হোসেন। এর পর তিনি ও সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে নিয়োগ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ৭০ সদস্যের। গত ১২ মার্চ সেটি গণমাধ্যমেও পাঠানো হয়, যাতে ড. কামাল হোসেনের অনুমোদিত স্বাক্ষর ছিল। তিনি আরও বলেন, ১৭ অক্টোবর সেন্ট্রাল কনভেনিং কমিটির বৈঠকে ড. কামাল হোসেন ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। কারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আমরা আমাদের নেতাকে সেভ রাখতে চাই। সাংগঠনিক কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে, যা এ সভায় অনুমোদন করা হবে।