স্থানীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ফরিদপুর ৪ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার বা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।
আজ দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ঢাকা ৫ ও ঢাকা ১৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি। কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘স্থানীয় সাংসদ বিধিবহির্ভূত আচরণ করেছেন। এ সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যউপাত্ত কমিশনের হাতে আছে। যা মামলা করার জন্য যথেষ্ট। পরে পুলিশ এটি তদন্ত করবে। এর বাইরে আরও কোনো অভিযোগ আসে কি না তা তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটিতে তিনজন সদস্য থাকবেন।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও নিক্সন চৌধুরীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলেন সিইসি। তিনি বলেছিলেন, ‘এমপি নিক্সন নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করেছেন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) হুমকি ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকারকে ‘দাঁতভাঙা জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়ে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোনে গালিগালাজের বিষয়টি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন নিক্সন। তিনি বলেন, “আমার বক্তব্যকে ‘সুপার এডিট’ করা হয়েছে। আমি এমন গালিগালাজ করিনি।”
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিক্সন এ দাবি করে আরও বলেন, ‘নির্বাচনের দিন কেন্দ্রের মাঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাওয়ায় আমাদের এক কর্মীকে গাড়িতে তোলেন ম্যাজিস্ট্রেট। আমি ইউএনওকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। এর বাইরে যে বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে, সেগুলো এডিট করা। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।’ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা এসব ছড়াচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
চরভদ্রাসনের ইউএনওর সঙ্গে তার ‘মধুর সম্পর্ক’ দাবি করে নিক্সন বলেন, ‘সংসদীয় আসনের তিন উপজেলার চরভদ্রাসন ও সদরপুরের ইউএনও নারী আর ভাঙ্গার ইউএনও একজন পুরুষ। তাদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি।’
ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এই সাংসদ বলেন, ‘গত শনিবারের উপনির্বাচনের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর চারজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয় জেলা প্রশাসন। নির্বাচনের আগের দিন কেন ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হলো? ইসির কি এ বিষয়ক চিঠি আছে? নির্বাচনের দিন বিজিবি সঙ্গে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের মারমুখী আচরণ করতে দেখা গেছে। যেখানে নৌকার ভোট বেশি, সেখানেই ম্যাজিস্ট্রেটরা বেশি তাণ্ডব করেছেন।’
নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করার জের ধরে ভাঙা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এসি ল্যান্ডকে গালিগালাজ করেন নিক্সন। এ প্রসঙ্গে তিনি রহমান জানান, সারাদিন ম্যাজিস্ট্রেটরা যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, তাতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। নেতাকর্মীরা উত্তেজিত ছিল। প্রশাসনের অনুরোধে তিনি নেতাকর্মীদের ‘ঠান্ডা’ করতে গিয়েছিলেন।