নীতিমালা সংশোধনের পরও ক্রেডিট কার্ডের গলাকাটা সার্ভিস চার্জ কমছে না। বরং নীতিমালার ফাঁকফোকর দিয়ে বাড়তি সুদ আদায় করা হচ্ছে গ্রাহকের কাছ থেকে। এর ফলে সুদহার কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা বাস্তবে কাজে আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রাহকদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আনার জন্য নীতিমালা জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছিল ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড বাদে অন্য সেবাগুলোর মধ্যে যে সেবায় সর্বোচ্চ সুদ বা চার্জ আরোপ করা হয় তার চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি মুনাফ বা চার্জ ক্রেডিট কার্ড থেকে আদায় করা যাবে না। যেমন, একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ সুদ আদায় করা হয় ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ ২৩ (১৮+৫) শতাংশের বেশি সুদ বা চার্জ আদায় করা যাবে না। গত ১ জানুয়ারি থেকে এ নীতিমালা পরিপালনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকে। ফলে এর আগে ক্রেডিট কার্ড পরিচালনা করে এমন ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে ১৮টিরই শোকজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেই নড়েচড়ে বসে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ফাঁকফোকর দিয়ে ২৮ থেকে ৩২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায় করছে কোনো কোনো ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড থেকে বাড়তি সুদ আদায় করার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড বাদে অন্য যেসব সেবায় সর্বোচ্চ সুদ আদায় করা হয় তার থেকে ৫ শতাংশ যুক্ত হবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো সীমা বেঁধে দেয়নি। এ কারণে ব্যাংকগুলো এ সুযোগটি নিচ্ছে। একটি অপ্রচলিত সেবা চালু করা হচ্ছে। যার সুদহার নির্ধারণ করা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫। এ সেবা থেকে ঋণ বিতরণও করা হচ্ছে না। অথচ ওই সেবাকে সর্বোচ্চ ভিত্তি ধরে এর সাথে ৫ শতাংশ যুক্ত করে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণ করা হচ্ছে। যেমন, কোনো ব্যাংকের এমন একটি সেবার সুদহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করলে আর এর সাথে ৫ শতাংশ যুক্ত করে ৩০ শতাংশ ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে না। ব্যাংকও অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ আদায় করতে পারছে নির্বিঘেœ। এভাবেই নীতিমালার ফাঁক দিয়ে বাড়তি অর্থ আদায় করছে সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর নানা কারণে সঙ্কট বেড়ে চলছে। একে তো উৎপাদনশীল খাতে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে তার বেশির ভাগই আদায় হচ্ছে না। যারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতেন তাদেরও বড় একটি অংশ ঋণ পরিশোধ করছে না নানা অজুহাতে। ঋণখেলাপিদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুযোগটি নেয়ার জন্য যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও সুদহারে রেয়াত পাওয়ার জন্য ঋণ পরিশোধ করছেন না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সুযোগ নিয়ে ঋণনবায়নের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। এভাবেই ব্যাংকগুলোতে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা খেলাপি ঋণে আটকে যাচ্ছে। এর ওপর নয়-ছয় সুদ হারের ওপর চাপ রয়েছে। পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম সুদে সরকারের বাধ্যতামূলক ঋণের জোগান দেয়া হচ্ছে। অথচ ব্যাংকগুলো এখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এভাবে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে গেছে। তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে ভোক্তাঋণ, ক্রেডিটকার্ডসহ নানা অপ্রচলিত সেবা থেকে বাড়তি সুদ আদায় করে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কিছুটা হলেও সমন্বয় করতে হচ্ছে।