ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে যে কোনো সময়। একাধিকবার যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। এসব কমিটিতে অর্ধশতাধিক নতুন মুখ আসছে। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতাদেরও নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে নতুন ৩৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে উত্তরের প্রস্তাবিত কমিটিতে ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণের কমিটিতে সদস্য পদে ১২ কাউন্সিলরের নাম থাকলেও উত্তরে কোনো কাউন্সিলর বা জনপ্রতিনিধি রাখা হয়নি। যদিও কাউন্সিলরদের মহানগর কমিটির কোনো পদে না রাখার নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটির সহসভাপতি ও সম্পাদকম-লীর অনেকেই নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
সূত্র বলেছে, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ও মহানগর কমিটি থেকে ৬ জন, ছাত্রলীগের সাবেক ১৬ জন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১ এবং থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ থেকে ১১ জনকে নগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭৫ সদস্যের মহানগর কমিটিতে অতিরিক্ত পাঁচটি নাম দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের গত সম্মেলনে ৭১ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করার অনুমতি দেওয়া হয়। আগের ৭১ সদস্যের কমিটিতে দুটি পদ ফাঁকা ছিল। ৫ সদস্য মারা যাওয়ায় এবং ৪টি পদ বাড়ায় মোট ১১টি পদ খালি হয়। গত কমিটির ২৩ জনকে বাদ দিয়ে মোট ৩৪টি পদ খালি হয়। এ পদগুলোতে নতুন ৩৪ জনকে পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটির কয়েকটি পদে আপত্তির কারণে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দেন। তারা পুনরায় যাচাই-বাছাই করে কয়েকটি সহসভাপতি ও সম্পাদকীয় পদে পরিবর্তন এনে দুই সপ্তাহ আগে প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জমা দেন। এর পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে কমিটি চূড়ান্ত করা হয়।
জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফি বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কমুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যক্তিদের রাখার চেষ্টা করেছি। কাজ করার জন্য কিছু গতিশীল লোক প্রয়োজন। তাই নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করার চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
এদিকে করোনার আগেই ব্যবসায়ীসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ থেকে বেশ কয়েকজনকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দেয় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট আগের কমিটির তিনজন মারা গেছেন। এ তিনটি পদসহ আরও অন্তত ১০ জন বাদ পড়তে পারেন। এসব পদে নতুন মুখ আসতে পারে। সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বেশ কয়েকটি থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অনেকেই নগর কমিটিতে আসতে পারেন। প্রস্তাবিত কমিটিতে সদ্য সাবেক কমিটির কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি। অনেককে দেওয়া হয়েছে পদন্নোতি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, করোনার আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি খসড়া তালিকা জমা দিয়েছি। কমিটিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যারা দক্ষ, পরিশ্রমী এবং ১/১১ সময়ে যারা রাজপথের রাজনীতিতে অবদান রেখেছেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের কর্মসূচিতে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের রাখা হয়নি। বিতর্কিতদের না রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। এবারের কমিটিতে জনপ্রতিনিধি বা কোনো কাউন্সিলরকে রাখা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হচ্ছেন একঝাঁক নতুন মুখ। বাদ পড়ছেন অর্ধশতাধিক নেতা। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে সভাপতি ও মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১ বছর পর ১৭১ সদস্যের কমিটির চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এবার যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সংখ্যা ২৬ থেকে বাড়িয়ে ২৮ করা হচ্ছে। তার মধ্যে সাবেক কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্য থেকে মাত্র চার থেকে পাঁচ জন, যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্য থেকে চারজন, সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্য থেকে দুজন, সম্পাদকম-লী থেকে চারজন থাকছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ একটি বেড়ে ছয়টি হচ্ছে। ২০টি সম্পাদকম-লীর সদস্যপদ ছিল গত কমিটিতে। বর্তমানে এটি বেড়ে ২২টি হচ্ছে। পুরনো কমিটি থেকে চারজন, উপসম্পাদক থেকে আটজন, সহসম্পাদক থেকে চারজন, সদস্য থেকে দুজন নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাচ্ছেন। বাকিরা প্রথমবারের মতো যুবলীগের কমিটিতে আসছেন।