বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

সুপার পাওয়ার হওয়ার পথে তুরস্ক

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৩৫ বার

তুরস্ককে উন্নয়নের পথে যাত্রার পূর্ণতা দিতে মহান দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রজব তাইয়েব এরদোগান। তিনি তার দায়িত্বের শুরুর দিকে দেশটিকে কোনো রাজনৈতিক সমস্যায় জড়ানো ছাড়াই উন্নয়নের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে, যা আইএমএফের ঋণের ভারে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, নতুনভাবে সুদৃঢ় এবং তুরস্ককে বিশ্বের ১৬তম শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ বানাতে সফলতা অর্জন করেন। প্রথমদিকে এরদোগান প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করার জন্য ‘জিরো প্রবলেমস’ নীতি অবলম্বন করেন। কুর্দি সমস্যার সমাধানে সদিচ্ছা নিয়ে চেষ্টাও করেছেন এবং এ সমস্যা সমাধানের দিকে এগিয়েও গিয়েছিলেন।

কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে জাতীয়তাবাদীরা তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে শুরু করে এবং তিনি কুর্দিদের যে সমস্যাকে গণতান্ত্রিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন দলের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কারণে তাতে বিরত থাকাটাকেই নিরাপদ ভাবেন এবং তুর্কি জাতীয়তাবাদী দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সাথে জোট করতে বাধ্য হন। আর নিজের দলের নীতিরও সম্পাদনা করেছেন। বিশেষ করে ১৫ জুলাই, ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এরদোগান সেনাবাহিনীর ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জন করেন এবং সেনাবাহিনীকে সেই গ্রুপ থেকে পরিচ্ছন্ন করেন, যারা তার জন্য হুমকি মনে হয়েছিল। এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরই তিনি তুরস্কের বিশাল যাত্রাকে বহাল করার জন্য নতুনভাবে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেন এবং আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় নিজেদের বহু দূতাবাস খুলেন।

আর ওই সব দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন যাদেরকে এর আগে তুরস্ক ভুলে গিয়েছিল। এরদোগান আমেরিকার পরোয়া না করেই, ২০১০ সালে ফিলিস্তিনে মানবতার ভিত্তিতে সাহায্যের পথে বাধা সৃষ্টি করায় ইসরাইলের প্রেসিডেন্টকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা শুনিয়ে দেন এবং আমেরিকার দূতাবাসকে পশ্চিম আল কুদসে স্থানান্তর করায় কঠোর সমালোচনা করে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। যে সময় সব পশ্চিমা রাষ্ট্র এবং বিশেষত পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ ভাবা হয় এমন ‘ইসলামী’ দেশগুলো কাশ্মির সমস্যা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, সেই সময় এরদোগান জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে পাকিস্তানের অবস্থানকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন এবং ভারতকে জালিম ও হানাদার বলে অভিহিত করেছেন। সিরিয়াতে তুরস্ক যে নীতি অবলম্বন করছে তার কারণে আমেরিকার মতো দেশকে কুর্দিদের সহায়তা থেকে পিছু হটতে হয়েছে এবং তুরস্ক এই অঞ্চলে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে প্রভাব বিস্তারে সফল হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রকাশ্যে বলেছেন, তুরস্ক বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেদের অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং সিরিয়া, লিবিয়া ও ভূমধ্যসাগর থেকে ককেশাস পর্যন্ত বন্ধু ও মজলুম ভাইদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে।

ওদিকে বর্তমানে গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে গেছে। ইসরাইল, গ্রিস, সাইপ্রাস, ইতালি ও মিসর ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে গ্যাস থাকার সম্ভাবনার ওপর এক যৌথ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এতে তুরস্ককে উপেক্ষা করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে তুরস্ক একাই সাইপ্রাসের উন্মুক্ত সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সামুদ্রিক ড্রিলিং জাহাজ পাঠিয়েছে। এই দেশগুলোর পক্ষ থেকে তুরস্ককে একা করে দেয়ায় তুরস্ক তার জবাবসূচক কার্যক্রম শুরু করেছে এবং লিবিয়ার সাংবিধানিক সরকারের সাথে চুক্তি করে সাইপ্রাসের উন্মুক্ত সমুদ্রে গ্রিসের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করে দিয়েছে। যদিও এই সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও মধ্যপ্রাচ্যে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন; কিন্তু তুরস্ক লিবিয়াতে তার অবস্থান সুদৃঢ় করে ম্যাক্রোঁকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এরদোগান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব অবলম্বনের ওপরও কঠোর সমালোচনা করেছেন। ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শনীকে এক ব্যাধি ও হীন মানসিকতার প্রতিচ্ছবি অভিহিত করে তাকে ‘মানসিক রোগী’ আখ্যায়িত করেছেন। ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এ বক্তব্যের পর তুরস্ক থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়।

তুরস্ক আজারবাইজানের অর্জিত সফলতাতেও বেশ ‘ফুরফুরে মেজাজে’ রয়েছে। কেননা, আজারবাইজানের সফলতার পেছনে তুরস্কের হাত রয়েছে। রাশিয়া এবার প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কারণে প্রকাশ্যে আর্মেনিয়াকে সহায়তা করা থেকে দূরে থাকছে। আর রাশিয়ার এই মনোভাব আজারবাইজানের জন্য সফলতার দরজা খুলে দিয়েছে। রাশিয়া ও তুরস্ক এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে। আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে যদিও দুটি দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তথাপি তুরস্ক ও রাশিয়ার মাঝে গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কও রয়েছে। রাশিয়া তুরস্কের তৃতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং তারা তুরস্কের জ্বালানি খাতের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকার পরোয়া না করে যেভাবে রাশিয়া থেকে অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম এস-৪০০ ক্রয় করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর চাপ ও সতর্কতা সত্ত্বেও পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাতে তুরস্ক এ অঞ্চলে এক নতুন সুপার পাওয়ার হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এ অঞ্চলে তুরস্ক তার শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে এবং সম্ভবত এখন তাকে আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার হতে বাধা দেয়ার মতো কোনো রাষ্ট্র বা শক্তি বিদ্যমান নেই।

পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং ২৯ অক্টোবর,
২০২০ থেকে ভাষান্তর
ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ahmadimtiajdr@gmail.com

লেখক : তুরস্ক রেডিও ও টেলিভিশনের (টিআরটি) উর্দু সার্ভিসের প্রধান

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com