সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি একটি প্রহসনে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমরা বলে আসছি নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হোক। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে অনেকগুলো প্রস্তাব আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিলাম। একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন আর এই নির্বাচন কমিশন যদি শক্তিশালী না হয়, তারা যদি সরকারের প্রভাবমুক্ত না হয় তবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের কাছে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা সেখানে স্পষ্টভাবে বলেছিলাম, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি সার্চ কমিটি করা হবে এবং সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হবে। তারা আমাদের কোনো প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করেননি। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিজের মনের মত তৈরি করা। ফলে আজকে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সব জায়গায় তারা সম্পূর্ণ দখলদারিত্ব তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে। এটাই গণতন্ত্রের মূল ফাউন্ডেশন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এখন মাত্র ৫-৬% ভোটার ভোট কেন্দ্রে যান। মোট কথা, যারা প্রতিনিধিত্বমূলক একটি রাষ্ট্র তৈরি করে সেই জায়গাটাতে ধস নেমে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও আমরা দীর্ঘ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলাম। তারা কথা দিয়েও সেটা করেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আবারো তারা আমাদের সাথে সংলাপ করেছিলো। কিন্তু সম্পূর্ণ বিশ্বাসঘাতকতা অর্থাৎ আমাদের কোনো দাবি তারা রাখেনি। ৩০ তারিখ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তারা ২৯ তারিখ রাতে অর্থাৎ আগের রাতেই ভোট কারচুপির মাধ্যমে নিজেদের পক্ষে নির্বাচন নিয়ে নিয়েছেন। জনগণ এগুলো সব দেখছেন কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছেন না। কারণ তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। তারা অসহায় হয়ে পরেছে।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে গণতন্ত্রকে ধংস করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা দেখে বর্তমান সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শিক্ষা নেয়া উচিত। তারা সম্পূর্ণ চাপের মধ্যে থেকেও পুরোপুরি অবিচল ছিলো। জনগণের যে রায় সেটাই গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপেক্ষ ও শক্তিশালী করতে হবে। প্রশাসনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, ১৯৯০ সালেও সংগ্রাম করেছি। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধংস করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি দাঁড়িয়ে যায় এবং সেগুলো শক্তিশালী হয় তবে কেউ জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। ভারতের বিহারে নির্বাচন হয়েছে, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন এতোকিছুর পরও তাদের নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আপনারা বাইডেনের বক্তব্যগুলো লক্ষ্য করবেন, আমি তো রীতিমতো তার ভক্ত হয়ে গেছি। তার বক্তব্য কোনো দল বা ব্যক্তির জন্য না। এটা গণতন্ত্রের স্পিড। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বলেছেন, নির্বাচনের আগে যেগুলো হয়েছে তা বাদ দিয়ে আমেরিকার অগ্রযাত্রায় আসুন সবাই একসাথে কাজ করি। এটাই গণতান্ত্রিক নেতার বক্তব্য হওয়ার কথা। ঠিক একইভাবে আজ বাংলাদেশে আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি না করে বাংলাদেশী রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক রাখি।
তিনি বলেন, তত্বাবধায়ক সরকার তারা কেন বাদ দিলো? তারাইতো এই তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন আন্দোলন করেছিলেন। তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে, এটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এই যে দাম্ভিকতা অহংকার এর মাধ্যমেই আজ এদেশে গণতন্ত্রকে ধংস করা হয়েছে।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।