শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন

যুক্তরাজ্যে করোনার আরো একটি নতুন ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত, উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৭১ বার

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছেন, দেশটিতে আরো একটি নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। লন্ডন ও উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের আক্রান্ত ওই দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসটির উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই দুই ব্যক্তির ভাইরাস শনাক্তের পর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গত ১৪ দিনে যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ করেছেন অথবা ভ্রমণকরা ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের অতি সত্ত্বর কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এরইমধ্যে এই ভাইরাসটি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোয়াইলি ম্যাখিজে সতর্ক করে বলেন, ‘আগে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন এমন ব্যক্তিরাও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এইডস মহামারির শুরুর দিকে যে অবস্থা পার করেছি, ওই একই অবস্থা আবার পার করতে পারবো না।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের এই বৈশিষ্ট্য বা ভ্যারিয়ান্টটি ‘দ্রুত ছড়ায়’ এবং দেশটির অনেক এলাকায় এর সংক্রমণও বেশি দেখা যাচ্ছে। এই ভ্যারিয়ান্টটি নিয়ে এখনো বিশ্লেষণ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

মঙ্গলবারই প্রথমবারের মতো এটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করা হয়।

‘বিস্ফোরক প্রাদুর্ভাব’
নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটির সাথে এর আগে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন বৈশিষ্ট্যের আরেকটি ভাইরাসের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে। যদিও ভাইরাস দুটি আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। দুটি ভাইরাসেরই একটি নির্দিষ্ট অংশে ‘এন ফাইভ জিরো ওয়ান ওয়াই’ নামে একটি পরিবর্তন হয়েছে। ওই অংশটি দিয়ে মানুষের দেহের কোষকে আক্রান্ত করে ভাইরাসগুলো।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, ‘আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি যে ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ থাকা উচিত তা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসটি। কারণ, এই ভাইরাসটি বিস্ফোরকের মতো সংক্রমণের বিস্ময়কর রিপোর্ট রয়েছে এবং এর সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি হারও অত্যধিক।’

ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, “নতুন ভ্যারিয়ান্টটি ‘খুবই উদ্বেগজনক’ এবং যাদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের ‘অন্য যেকোনো ব্যক্তির সাথে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে লাখ লাখ মানুষকে ক্রিসমাসের পরের দিন বা বক্সিং ডে থেকেই চতুর্থ পর্যায় বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিধি-নিষেধের আওতায় আনা হবে।

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ডা: সুসান হপকিন্স বলেন, ‘দুটি ভাইরাসই মনে হচ্ছে যে তারা অত্যন্ত সংক্রমণশীল। তারা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে আসা ভাইরাসটির ভ্যারিয়ান্ট সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। তিনি খুব নিশ্চিত যে কোয়ারেন্টিন এবং ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়ান্টটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব।’

ওয়ারউইক মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক লরেন্স ইয়াং বলেন, ‘সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে যে বিধি-নিষেধ (হাত, মুখ, অন্যান্য স্থান বিষয়ক) রয়েছে তা নতুন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়াও ঠেকাবে। দেশ জুড়ে বিধি নিষেধ আরো কঠোর করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?
বিবিসি নিউজের ফারুক চোথিয়া তার ব্যাখ্যায় বলেন, উৎসবের মওসুমেও সরকার বিধি-নিষেধ কঠোর করেছে। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশের বিখ্যাত গার্ডেন রুট সৈকত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে একটি বিরোধী দল এবং কয়েকটি লবি গ্রুপ। তারা আদালতে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দাবি করেছেন যে, সৈকত বন্ধ করে দেয়া হলে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বিচারকরা সরকারি সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছেন এবং বলেছেন যে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের।

ওয়েস্টার্ন কেপের প্রিমিয়ার অ্যালান উইন্ডি বলেন, প্রদেশের হাসপাতালগুলো এরইমধ্যে মারাত্মক ধকলে পড়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায়ও প্রদেশটিতে বর্তমানে বেশি করোনায় আক্রান্ত রোগী রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো পর্যন্ত ৯৫ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ- যা আফ্রিকায় সর্বোচ্চ।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com