ক্যানসার মরণব্যাধি- এ কথা প্রায় সবারই জানা। মানবদেহ প্রায় ২০০ ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে স্তন ক্যানসার একটি। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, স্তন ক্যানসার শুধু নারীরই হতে পারে। কিন্তু এমন ধারণা ভুল। পুরুষও এ রোগ থেকে শঙ্কামুক্ত নন। তবে পুরুষরা এই ভেবে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন, নারীর তুলনায় এ রোগে কম আক্রান্ত হয়ে থাকেন পুরুষরা। কিন্তু ইদানীং বাড়ছে। কাজেই পুরুষকেও স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নইলে এ ক্যানসার প্রাণে আঘাত হানতে পারে।
সাধারণত পুরুষের বুকের দেওয়ালে স্তনবৃন্তের ঠিক নিচে অল্প পরিমাণ অকার্যকরী কিছু স্তনকোষ থাকে। এ কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিতে পুরুষের মধ্যে স্তন ক্যানসার দেখা দিয়ে থাকে।
পুরুষের স্তন ক্যানসারের লক্ষণ : একটি ব্যথাহীন পি- তৈরি হয় স্তনকলার মধ্যে। যে চামড়া স্তন ঢেকে রাখে, সেটির পরিবর্তন দেখা যায়। চামড়া লাল হয়ে যায়, কুঁচকে যায়, তাতে ভাঁজ বা খাঁজ তৈরি হয়। স্তনবৃন্তের রঙের পরিবর্তন হয়। লালচে হয়ে যায় বা ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। স্তনবৃন্ত থেকে রস ক্ষরণ হয়। এ ছাড়া বুকে ঘা বা লাম্পের (ব্যথাবিহীন মাংসপি-) উপস্থিতি হলে, বুক স্তনের আকার নিচ্ছে কিনা, খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় গলায় বা কণ্ঠনালির ওপর ঘা দেখা দেয়। যদি পুরুষের স্তনবৃন্তে ঘা দেখা যায়, প্রথম পর্যায়েই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ শুরু করতে হবে।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি : আলট্রাসাউন্ড ও ম্যামোগ্রাফির মাধ্যমে স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। বায়োপ্সির সঙ্গে করা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোনের পরীক্ষা ছাড়াও করা হয়ে থাকে প্রোটিন পরীক্ষাও।
চিকিৎসা : অপারেশনই পুরুষের স্তন ক্যানসার নিরাময়ে উত্তম চিকিৎসা। এটির মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে যে পি- (টিউমার) তৈরি হয়, তাকে বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রেডিয়েশন থেরাপিরও প্রয়োজন হয়। এক্স-রে জাতীয় উচ্চ শক্তির রশ্মি দিয়ে ক্যানসারকোষগুলো মেরে ফেলা হয়। চলে কেমোথেরাপি। অর্থাৎ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওষুধ দিয়ে ক্যানসারকোষগুলো মেরে ফেলা হয়। এ ছাড়া পুরুষের স্তন ক্যানসার নিরাময়ের জন্য ব্যাপকভাবে চলে হরমোন থেরাপি। মূলকথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হলে রোগীর পক্ষে পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব হয়।
আসুন, ক্যানসারের সার্বিক প্রতিরোধ, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে মরণব্যাধিটি নিয়ন্ত্রণ করি এবং সুস্থ থাকি।