চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে হোঁচট খেয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আহরণে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই তৈরি হচ্ছে আগামী বাজেট। ২০২১-২২ অর্থবছরের আসছে বাজেটে সার্বিক ঘাটতি ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এটি প্রাক্কলিত নতুন জিডিপির ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি জিডিপির ৬ শতাংশ। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে ঘাটতি কমছে।
এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মোট আদায় হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে ঘাটতি হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির’ (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপির চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা, যা কি না নতুন অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিপিডির ৬ শতাংশ। প্রসঙ্গত নতুন অর্থবছরের প্রাক্কলিত জিডিপির আকার হচ্ছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বর্তমান এডিপির আকার কাটছাঁট করা হতে পারে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে আকার ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকৃত এডিপি বাস্তবায়নের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির অর্থ ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, ২০১৯ সালে করা অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, গত ছয়টি (২০১৯ সালের আগে) অর্থবছরে মূল এডিপির আকার বেড়েছে প্রায় ২১৪ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে, সেগুলোর মোট ব্যয় ১৫ লাখ কোটি টাকার অধিক। সে হিসাবে বছরে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে প্রতি বছরই মূল বাজেটের এডিপি কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি প্রণয়ন করা হয়। আর সংশোধিত এডিপিও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না।
এ দিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার আগের তুলনায় বাড়লেও সংশোধিত এডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের’ (আইএমইডি) হিসাবে, গত পাঁচটি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার ৯২ শতাংশ। কিন্তু বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকৃত এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপির প্রায় ৮১ শতাংশ (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ)।