যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস ভবনের নাম ক্যাপিটল। এটিকে ‘ক্যাপিটল বিল্ডিং’ও বলা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের দুই কক্ষ – হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি সভা এবং সিনেট মিলে হলো কংগ্রেস। আর ক্যাপিটল ভবনটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। তাই বলা যায়, ক্যাপিটল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পরিচালিত হয়। ক্যাপিটল শব্দটি ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভূত। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই এখন প্রশ্ন ৬ই জানুয়ারি কি ঘটেছিল ক্যাপিটলে? চলুন, জেনে নেয়া যাক সেদিনের ঘটনাপ্রবাহঃ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পপুলার এনং ইলেক্টোরাল দুই রকমের ভোটেই হেরে যান। কিন্তু কারচুপির অভিযোগে হার মেনে নিচ্ছেন না তিনি।
কারচুপির কোন প্রমাণ দাখিল করতে না পেরে আদালতেও বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
তার এসব অপচেষ্টার সর্বশেষটি ছিল ৬ই জানুয়ারি। কারণ সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন-প্রণেতারা বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য (ইতিমধ্যেই নির্বাচিত হতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যাওয়া বাইডেনের ভোটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করতে) অধিবেশনে বসে। গত কয়েকদিন ধরেই টুইটার এবং সমাবেশে ট্রাম্পের সরাসরি উস্কানিতে তার শত শত উগ্রপন্থী সমর্থক অধিবেশন চলাকালেই দুপুরের পর ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে ট্রাম্প ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি হামলাকে বিক্ষোভ নয়, বিদ্রোহ বলে আখ্যা দেন। এরপর তিনি আবারো অভিযোগ তোলেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে।
যাই হোক, কয়েক ঘণ্টা ক্যাপিটল কার্যত দখল করে রেখে, আতংক সৃষ্টি করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে না পেরে বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যেতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কংগ্রেস সদস্য, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মধ্যেই কংগ্রেস অধিবেশন স্থগিত করা হয়। বাইডেনের জয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনও আটকে যায়। বাইডেন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একে ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে আখ্যায়িত করেন।
এরপর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হলেও সন্ধ্যার পর শত শত ট্রাম্প সমর্থক বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা যায়। গণমাধ্যমের দেয়া তথ্যমতে, একজন নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যান। বিবিসি জানিয়েছে, এ ঘটনায় ৪জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্যও। হামলার প্রেক্ষিতে ফেসবুক, টুইটার ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িক লক করে দেয়। নিজ দলের নেতারাও ট্রাম্পকে ধিক্কার জানান। অনেকে তাকে অভিশংসনের দাবিও জানান। এমন তান্ডবের ধিক্কার জানাতে থাকেন বিশ্বনেতারাও। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ফার্স্টলেডি মেলানিয়ার কর্মকর্তাদের মাঝে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র জরুরি অবস্থা আরো ১৫ দিনের জন্য বর্ধিত করেছেন। সিএনএন জানিয়েছে, ক্যাপিটলকে নিরাপদ করা হয়েছে, যৌথ অধিবেশন আবার শুরু হয়েছে এবং আইন প্রণেতারা বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবেন। ইতিমধ্যেই পেন্সিলভেনিয়ার ভোট জালিয়াতি নিয়ে করা একটি অভিযোগ রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেট বাতিল করে সেখানকার ইলেক্টোরাল ভোট অনুমোদন করে দিয়েছে। ডেমোক্রেট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভও যে তাই করবে তা সহজেই অনুমেয়।