বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ঢাকা সিটি মেয়রের পদ দখল করেছিলেন সাঈদ খোকন। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিশিরাতের এমপি পদ ছেড়ে কোন মধুর লোভে মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলে নূর তাপস মেয়র পদ দখল করেছেন। সেই মধুভাণ্ডের কাহিনী এখন আরব্যরজনীর গল্পের মতো মনে হলেও সেটিই বাস্তবে ঘটেছে। সাঈদ খোকন বলছেন, “মেয়র তাপস শত শত কোটি টাকা লুট করছেন”। অপরদিকে মেয়র তাপস বলছেন, “শত শত কোটি টাকা লুট করেছেন সাঈদ খোকন”। দুজনই রাজপথে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে একে অপরের দুর্নীতি, লুটপাটের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। তবে এটি স্পষ্ট যে, তারা দুজনই লুটেরা, দুজনই দুর্নীতিবাজ। এখন দুদক কী করবে? তামাশা দেখবে, না পদক্ষেপ নেবে? দুদক পদক্ষেপ নিতে পারবে না, কারণ দুজনই ক্ষমতাশালী ও শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজন।’
আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুদক এদের (তাপস-খোকন) বিরুদ্ধে এক পা-ও অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ, বিএনপি নিধনের জন্যই দুদককে সাজিয়েছেন শেখ হাসিনা। জনগণকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করে, জনগণের বিরুদ্ধে ইউনিফর্ম পরা সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে আর বেশিদিন মানুষের মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না। কথায় বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করছেন এসব কথার উদ্দেশ্য যাই হোক, তার বক্তব্যে অনেক সত্য বেরিয়ে আসছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে খোদ ওবায়দুল কাদের সাহেব জিতবেন কিনা, তার আপন ছোট ভাই-ই এ প্রশ্ন তুলেছেন। আওয়ামী লীগের এই তিনজন (তাপস-খোকন-কাদের মির্জা) নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হয়েছে- আওয়ামী লীগের ‘টপ টু বটম’ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। লুটপাটে কে কাকে টক্কর দিতে পেরেছে এ নিয়েই তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছে। আওয়ামী লীগ তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গিয়ে যে সত্য তুলে ধরছে তাতে প্রমাণিত, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এদেশে দুর্গতির জনকই আওয়ামী লীগ।’
বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার আখ্যা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই ফ্যাসিস্টদের পরাস্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দল-মত নির্বিশেষে গণতন্ত্রমনা সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার উদাত্ত আহ্বান করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ১৯ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’র ৮৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন রিজভী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৯ জানুয়ারি বেলা ১১টায় দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, দৈনিক সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র ও পোস্টার প্রকাশ, বিকেল ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ পেশাজীবী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ জিয়ার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শণ এবং ড্যাবসহ চিকিৎসকদের সংগঠন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবে।
অনুরূপভাবে সারাদেশে বিভিন্ন পর্যায়ের ইউনিটসমূহ নিজেদের সুবিধানুযায়ী সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূইয়া, শাহীদা রফিক, মীর সরাফৎ আলী সপু ও আব্দুল খালেক প্রমুখ।