করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঘরবন্দি রাজনীতি সরব হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। বড় দুই রাজনৈতিক দল মাঠের কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্য কয়েকটি দলও নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছে। দলীয় কাউন্সিল আয়োজনের চিন্তা করছে কয়েকটি দল। ইতিমধ্যে ছয়টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ওই সিটিগুলোতে পর্যায়ক্রমে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ১৩ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হবে কর্মসূচি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করাই মূল লক্ষ্য। এছাড়া সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল ঘিরে দলটির নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিরোধী বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করায় সরকারি দল আওয়ামী লীগও মাঠের কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে। বিএনপি’র রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে নানা ধরনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৫ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল এবং রাজশাহী মহানগরে সমাবেশ করা হবে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার ওই ঘোষণা দেন। দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের উপস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, ৬ সিটি করপোরেশন এলাকার জনগণকে ভোট কারচুপির বিষয়ে জানাতে আমরা নগর সমাবেশ করবো। প্রথম সমাবেশ হবে আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বরিশালে ১৮ই ফেব্রুয়ারি, খুলনায় ২৭শে ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে ১লা মার্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরে ৩রা মার্চ এবং দক্ষিণে ৪ঠা মার্চ সমাবেশ হবে। বিএনপির এই ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সভা-সমাবেশ, প্রতিনিধি সভা ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানান। এসব কর্মসূচি পালনে মূল দলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঘোষিত কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি। ওদিকে গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাদেরও দেখা গেছে। তারা মানবজমিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা জানতে পার্টি অফিসে এসেছি। সামনে আমাদের অনেক কর্মসূচি আছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা আমাদের সবাইকে দ্রুত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল না। এবার মনে হয় আমাদের মাঠে নামতে হবে। এদিকে দলটির দুই কার্যালয় থেকে গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতারা টেলিফোনে এসব নির্দেশনা দেন। তবে নিজেদের কর্মসূচিকে বিএনপি’র কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিএনপির পাল্টাপাল্টি নয়। আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বিশ্বাসী নয়। আমাদের এ কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিত এবং প্রতি বছরের মতো এবারও তা পালন করা হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মার্চ মাস পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক কমে আসায় আবার রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো মূল দলের সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসূচি পালন করবে। আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সব শাখা আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবেশ, জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে। এ বিষয়ে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা স্ব-স্ব বিভাগের কর্মসূচি সমন্বয় করবেন। দলটির নেতারা জানান, করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক কমে আসায় তৃণমূলে আবার সম্মেলন শুরু করা হচ্ছে। চলতি মাসেই কমপক্ষে ১০টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে রাজনীতির মঠে তৎপরতার অংশ হিসেবে গত সোমবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশ করে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সব বক্তাই আগামী দিনে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার বার্তা দেন। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমাবেশে বলেন, দলকে সুন্দরভাবে সুসংগঠিত করে ইন্শাআল্লাহ অচিরেই আমরা মাঠে নামব। দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একইভাবে ঢাকার দুই মহানগরেও আলাদা সমাবেশ করে বড় শোডাউন করার প্রস্তুতি রয়েছে।