দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শাস্তির আওতায় আসছেন র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে অভিযুক্তদের নামের তালিকা জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তালিকায় অভিযুক্তদের থেকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে বুয়েটের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে বুয়েট প্রশাসন।
বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, বুয়েটের হলে পরপর তিনটি র্যাগিংয়ের ঘটনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। পরে একই ধরণের ঘটনায় হত্যার শিকার হন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ।
আবরার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আট দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরে আরো কয়েকটি দাবি যোগ করে দাবি ১০ দফা করা হয়। অচলাবস্থার মধ্যে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থাকায় বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রায় সবক’টি দাবি মেনে নিলে গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর আন্দোলন শিথিল করা হয়। তবে তাদের সব দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এবং ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানান।
বুয়েটের ১৬ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজের ধীর গতিতে তাদের ক্লাসে ফিরতে দেরি হচ্ছে। তাদের একাডেমিক পরীক্ষা এক মাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হয়নি। তারা চাচ্ছেন তাদের তিন দফা দাবি পূরণ করে বুয়েট প্রশাসন দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনুক।
বুয়েট প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আবরার হত্যার ঘটনায় বুয়েটের গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে অর্ধশত শিক্ষার্থীর নাম এসেছে। যেখানে চার্জশীটভুক্তদেরও নাম রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন সময়ে র্যাগিংয়ে অভিযুক্তদেরও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
অভিযুক্তদের ডিসিপ্লিনারি বোর্ড সাতজন করে কয়েক দফায় ডাকার পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করবে।
জানতে চাইলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবেদন পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের আমরা অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি নির্ধারণ করবো।
তিনি জানান, আশা করছি শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত পূরণ হবে।
এবিষয়ে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পরে তার পিএস মো: কামরুল হাসানের মাধ্যমে তিনি জানান, তারা শিক্ষার্থীদের তিন দফা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় নেয়া হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করে বুয়েটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না। তাদের দাবিকৃত তিন দফা হচ্ছে- মামলায় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, বিভিন্ন হলে র্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি বিধান নির্ধারণ করে তা প্রকাশ করা।
একই দিন দুপুর ১টার দিকে বুয়েট প্রশাসনের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম দাবিগুলো বিবেচনা করতে তিন সপ্তাহ সময় চান। তখন উপস্থিত ডীনরা দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করবেন বলে জানান।
এরই মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর এক মাসের মাথায় আরবার হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দিয়েছে আদালত। তার মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন এবং পাঁচজন এজাহারের বাইরে রয়েছে। মামলায় চার্জশীটভুক্তদের মধ্যে চারজন পলাতক রয়েছেন।
গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নিজের কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে বুয়েটের শাখা ছাত্রলীগের নেতারা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন তার বাবা বরকতউল্লাহ বাদি হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মামলা করেন।