শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

টিউলিপের সামনে হ্যাটট্রিক জয়ের হাতছানি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩৪০ বার

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যের নির্বাচন ততই সরগরব হয়ে উঠছে। আসন্ন এই নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এবারও হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে লড়বেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বর্তমান এমপি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।

পরপর দুইবার যুক্তরাজ্যেই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আসন্ন এই নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন তিনি। আর এ কারণে টিউলিপের সামনে হ্যাটট্রিক জয়ের হাতছানি দিচ্ছে।

আগামী ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হচ্ছে ব্রেক্সিট। কোন দল কিংবা প্রার্থীর চেয়ে ব্রেক্সিট প্রশ্নে ভোটারদের অবস্থানই ফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে টিউলিপ তার ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে আবারও জয়ী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিজ আসনের পূর্ব ইউরোপীয় ও মুসলিম ভোটারদের সমর্থন টিউলিপের জয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের আর মাত্র ২০ দিন বাকী। নির্বাচনে যে পাঁচ-ছয়‌টি আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো সেদিকে পাখির চোখ রেখেছে। তার মধ্যে একটি হলো- টিউলিপের হ্যাম‌পস্টেড ও কিলবার্ন।

লন্ডনের আসনগুলোর ম‌ধ্যে এবারও সেখানেই সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভো‌টের লড়াই হবে। নব্বই‌য়ের দশক থে‌কে এ আসন‌টি ব্রি‌টে‌নের তীব্র প্র‌তিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আস‌নগু‌লোর তা‌লিকায় দ্বিতীয় স্থা‌নে উঠে আসে।

দুই দফায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর ব্রি‌টে‌নের নানা রাজ‌নৈ‌তিক ইস্যু‌তে পার্লামেন্টের ভেত‌রে-বাইরে‌ রীতিমত ঝড় তুলে দিয়েছিলেন টিউলিপ। সা‌ড়ে চার বছ‌রের কম সময় দা‌য়িত্ব পালন করেই তি‌নি ব্রি‌টে‌নের রাজনী‌তি‌ ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু‌তে উঠে আসেন।

২০১৭ ব্রেক্সিট ইস্যুতে ছায়া মন্ত্রী থেকেও পদত্যাগ এবং নিজের নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন নিয়মিত। ট্রাম্পের সফরের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশি এই বংশোদ্ভূত ।

এছাড়া ওয়েস্ট মিনিস্টারে-১০ ভালো বক্তার তালিকায়ও প্রথম বাঙ্গালি এমপি হিসেবে জায়গা করে নেন টিউলিপ। আসন্ন নির্বাচ‌নকে সামনে রেখে বর্তমানে নিজ আসনে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার কর‌ছেন তিনি।

পূর্ব লন্ডনে যেমন বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের আধিপত্য রয়েছে, হ্যাম‌পস্টেড ও কিলবার্নে তা নেই। এই আসনে জয়-পরাজ‌য়ের অন্যতম নিয়ামক স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়। তাদেরকে কাছে টানার চেষ্টায় রয়েছেন টিউলিপ।

গত নির্বাচ‌নে কনজার‌ভে‌টি‌ভ প্রার্থী ক্লা‌রে লিউস এই আসন থেকে ১৮,৯০৪ ভোট পান, যা মোট ভো‌টের ৩২.৪ শতাংশ। আর টিউলিপ পান ‌মোট ভো‌টের ৫৯ শতাংশ। এই আসনে ক্ষমতাসীন কনজার‌ভে‌টি‌ভ দলের নতুন প্রার্থী জ‌নি লুক। ‌ তবে এবার সেখানে লেবার পার্টির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লিবা‌রেল ডে‌মো‌ক্রেট‌ (লি‌বডেম)।

নির্বাচনী জ‌রি‌পে লি‌বডেম প্রার্থী ম্যাথ স্যান্ডারর্স খানিকটা এগিয়ে থাকলেও তিন প্রার্থীর ম‌ধ্যে ‌টিউলিপই সব থেকে পরিচিত মুখ। ব্যক্তি ইমেজের দিক থেকেও তিনি এগিয়ে র‌য়ে‌ছেন। লেবার পার্টির কর্মী বা‌হিনীর পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত অনুরাগী-সমর্থকরাও লিফ‌লেট আর হ্যান্ড‌বিল নি‌য়ে ছুট‌ছেন ঘ‌রে ঘ‌রে।

ধারণা করা হচ্ছে, দুইবার আইনপ্রণেতা হিসেবে দা‌য়িত্ব পালনের সম‌য় নিজ আসনের জনগণের প্রতি টিউলিপ যে সংবেদনশীল ও বিনয়ী আচরণ করেছেন, তা তাকে এবারের নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দেবে।
লেবার পার্টির শতাধিক প্রার্থীর সঙ্গে টিউলিপও ‘রিমেইন লেবার ক্যাম্পেইন প্লেডজ’ নামের এক কর্মসূচিতে রয়েছেন। এর আওতায় তারা অঙ্গীকার করেছেন, ‘আমরা আবার গণভোট আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই আপনারা আপনাদের চূড়ান্ত রায় দেওয়ার সুযোগ পান। আমি পুনরায় এমপি নির্বাচিত হলে ইইউয়ে থাকার চেষ্টা করবো।’

ব্রি‌টে‌নের সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈ‌তিক বি‌শ্লেষক‌দের মতেও, জাতীয় ইস্যু হিসেবে এবার ব্রেক্সিটই নির্বাচনী আসনগু‌লোর জয়-পরাজ‌য়ের প্রধান নিয়ামক হ‌বে।

নির্বাচন নিয়ে সাংসদ টিউলিপ ব‌লে‌ছেন, ‘যেখানে আমি বেড়ে উঠেছি, পার্লামেন্টে সেই আসনের প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আমি হ্যামপস্টেড ও কিলবার্নে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি নই, আমি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই আসনের মানুষের প্রতি‌নি‌ধি।’

ব্যয় সংকোচন ও অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভোট দেওয়া না দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন আমার অতীত কাজগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।’

পরিবার ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য প্রসঙ্গে টিউলিপের ভাষ্য, ‘আমি যখন এ-লেভেলে পড়ি, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আমার পরিবারকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে স্মৃতিতে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বাংলাদেশ সফর। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশ সফর করেন। তার সঙ্গে নৈশভোজেও অংশ নিয়েছি। বিষয়টি ছিল খুবই আনন্দদায়ক।’ ২০১০ সালে ক্যামডন কাউন্সিলে নির্বাচিত হয় প্রথম বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকেই প্রচারণায় নেমেছি। প্রতিদিন মানুষের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছি, লিফলেট বিলি করছি। কিন্তু আমার আসল কাজ এখনো রয়ে গেছে। সে কাজটি হচ্ছে, নির্বাচনে হ্যাম্পটেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলকে জয়ী করা। এ জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম দরকার। ‘

টিউলিপ বলেন, ‘অনেকে আমার রাজনীতি করার কারণ জানতে চান। তারা জিজ্ঞেস করেন, আমার রাজনীতির মূল্যবোধ কী। আমি বলতে চাই, আমার রাজনীতির একটাই কারণ, তা হলো আমার পরিবার। আমার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা। আমার পরিবারের লোকেরা জনগণের সেবক। তারা সমাজে সমতা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এটাই আমার রাজনীতিতে আসার বড় কারণ। এটাই আমার মূল্যবোধ, যা লেবার পার্টিরও মূল্যবোধ।’

টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ‘রাজনীতিতে পরিবারের ছায়ার বাইরে এসে কিছু করে দেখাতে পেরেছি।’

উল্লেখ্য, ১৯৯২ সাল থেকে অস্কারজয়ী ব‌রেণ্য অভি‌নেত্রী গ্ল্যান্ডা জ্যাকসন দীর্ঘ ২৩ বছর হ্যাম‌পস্টেড ও কিলবার্ন আসন থে‌কে লেবার পার্টির প্রতি‌নি‌ধিত্ব ক‌রেন। ২০১০ সা‌লের নির্বাচ‌নে তিনি মাত্র ৪২ ভো‌টে জয় পান। তার পর এই আসনে প্রার্থী হন টিউলিপ।

ব্রি‌টে‌নের বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের অর্থনী‌তির অধ্যাপক ড. শ‌ফিক সি‌দ্দিক ও শেখ রেহানা দম্প‌তির তিন সন্তা‌নের ম‌ধ্যে টিউলিপ দ্বিতীয়। তার মা বাবার বি‌য়েও হ‌য়ে‌ছিল এই কিলবা‌র্নেই। ২০১৫ সা‌লে এ আসন থে‌কে প্রথমবার নির্বাচিত হন টিউলিপ। ওই নির্বাচ‌নে ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট পান তি‌নি। ২০১৭ সা‌লের নির্বাচ‌নে তি‌নি ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট পে‌য়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বা‌চিত হন। লন্ড‌নে জন্ম নেওয়া টিউলিপ ১৬ বছর বয়‌সে লেবার পার্টির সদস্য হ‌য়ে যুক্ত হন ব্রি‌টিশ রাজনী‌তি‌তে। আইনপ্রণেতা হওয়ার আগে তিনি ক্যাম‌ডেনের কাউন্সিলর ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com