নারায়ণগঞ্জে দেবোত্তর সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি আর বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ ও মূর্তিভাঙ্গার প্রতিবাদে মাইনোরিটি কোয়ালিশন, ইউএসএ’র উদ্যোগে নিউইয়র্কে সমাবেশ ও মানব বন্ধন হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় শনিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় এই কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। সমাবেশেকারীদের ভাষায় ‘বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর, জোরপূর্বক জমি দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, মন্দির/উপাসনালয়ে হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, জাতিগত বৈষম্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিহত করা’র জন্য সুশীল সমাজের প্রতি আহবান জানানো এবং বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে নিউইয়র্কের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু কোয়ালিশন ও নিউইয়র্ক বুদ্ধিস্ট কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি নেতা শীতাংশু গুহ, সঞ্জিত ঘোষ, ঐক্য পরিষদের দুই প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে ডা: টমাস দুলু রায় ও রণবীর বড়ুয়া, হিন্দু কোয়ালিশনের দীনেশ মজুমদার, গোবিন্দ বানিয়া, প্রকাশ গুপ্ত, নিতাই বাগচি, অংশু বৈদ্য প্রমুখ। বৌদ্ধদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মং এপ্রু, নিরুময় প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন শ্রী দীপক দাশ।
সমাবেশে শিতাংশু গুহ বলেন, আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, এই সমাবেশ কারো বিরুদ্ধেও নয়। কিন্তু আমরা আমাদের দেবোত্তর সম্পত্তি ফেরত চাই, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আহবান জানাই। তিনি বলেন, নারায়নগঞ্জের মেয়র আইভীর পরিবারের সদস্য নানা, মা, মামা ও চাচার নাম দেবোত্তর সম্পত্তিতে আছে, মেয়র হিসাবে এ সম্পত্তি মন্দিরকে ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ, কাজেই মন্দিরের সম্পত্তি মন্দিরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ডা. টমাস দুলু রায় বলেন, আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান জানাচ্ছি, কোন কাজ হচ্ছেনা। আমরা প্রতিকার চাই, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। দেবোত্তর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। তানাহলে নিউইয়র্ক থেকেই বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
রণবীর বড়ুয়া বৌদ্ধভিক্ষুর বিরুদ্ধে তথ্যমন্ত্রীর অপতৎপরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বারবার সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস দেয়ার পরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা উপর নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে।
সমাবেশের অন্যান্য বক্তারা বলেন, সম্প্রতি নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌরশহরের বাগিচা পাড়া শ্মশান কালী মন্দিরের মূর্তির মাথা, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে একটি কালীমন্দিরের প্রতিমা, শ্রীপুরে রাতের আদরে সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বক্তারা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ২০২০ সালে তিন হাজারের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।
বক্তারা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ভুমিদস্যু এরশাদ মাহমুদ কর্তৃক জ্ঞানশরণ বিহারের জমি ও বিহার দখলের উদ্দ্যেশে সর্বজন শ্রদ্ধেয় শরণংকর ভিক্ষুকে এলাকা ছাড়া এবং গত প্রায় ৫ মাস ধরে বিহারের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিহারের ভিক্ষু শ্রামণরা মানবেতরজীবন যাপন করছে বলে অভিযোগ করেন এবং একজন মন্ত্রীর পক্ষ না নিয়ে সমগ্র বৌদ্ধ জাতির কথা চিন্তা করে বিষয়টির সুরাহার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বক্তারা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের লোলাপুর গ্রামের আদিবাসী পচা কিসপট্টার জমি জবরদখল ও হামলা, বান্দরবান, চিম্বুক পাহাড়ে মুরং আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদ ছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশে কুয়াকাটা, বান্দরবান, কক্সবাজারের উখিয়া, খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ এবং রাঙ্গুনিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের মদদে শরণংকর ভিক্ষুর নামে মিথ্যাফেসবুক আইডি বানিয়ে যারা ধর্মীয় উস্কানিমূলক নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির দাবী জানান।