হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরকারের পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করেছে। এর প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এ হরতাল যেকোনো মূল্যে পালন করা হবে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনীর হামলায় পাঁচজন মৃত্যুবরণ করার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা ফজলুর রহমান কাসেমী, মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাজি, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা মূসা বিন ইজহার, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা মুহিব খান, মাওলানা গাজী ইয়াকুব, মাওলানা সুলতান মুহিউদ্দিন, মাওলানা ফয়সাল আহমদ, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, অধ্যাপক আব্দুল জলিল, মাওলানা আবু তাহের খান, মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা মুহসিনুল হাসান প্রমুখ।
সমাবেশে তারা বলেন, গতকাল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ চলাকালে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররমে ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী মসজিদে প্রবেশ করে সাধারণ মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। এতে অসংখ্য মুসল্লি হতাহত হয়। এরই প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ধর্মপ্রাণ মুসলামান ও ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, এতে হাজাহাজারী মাদরাসার চারজন ছাত্র শাহাদতবরণ করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভকালে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা ও গুলি চালালে সেখানেও একজন নিহত ও অসংখ্য বিক্ষোভকারী আহত হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়িতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালায়। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালানো হয়। আমরা এসব হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আনন্দঘণ সময় অতিবাহিত হচ্ছে। এই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের লক্ষে আমরা হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দল সংঘাতপূর্ণ যে কোনো কর্মসূচি থেকে বিরত ছিলাম। কিন্তু এই দিনে সরকার তার দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কলঙ্কিত করেছে।
বক্তারা বলেন, আমরা আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছিলাম যে, নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অতিথি করলে দেশে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্ত সরকার জনগণের হৃদয়ের মর্মবাণী বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে যখনই এই মোদির বাংলাদেশে আগমন ঘটে, সাধারণ জনগণ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে রাজপথে নেমে আসে। রাজপথে ঝরে যায় পাঁচটি তাজা প্রাণ।
বক্তারা বলেন, পাঁচ শহীদের রক্তের বদলা নিতে আগামীকাল রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চায়, যদি আমাদের হরতালের কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করা হয়, যদি আমাদের কোনো কর্মী হতাহত হয়, যদি কোনো জায়গায় হাটহাজারী-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তাহলে আগামী দিনে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।