আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও তার ছেলেসহ পরিবারকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত ৮টা ৫ মিনিটে মেয়রকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন। জিডি নং-৮১১, তারিখ- ১৭/০৪/২০২১।
জিডিতে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা উল্লেখ করেন, শনিবার সন্ধ্যা ৮টা ৫মিনিটে +৯৯১৬০০১৬১৬০ নাম্বার থেকে আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে আমি ও আমার একমাত্র সন্তান মির্জা মাসরুর কাদের তাশিকসহ স্বপরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। বহিরাগত ও স্থানীয় কতিপয় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীর যোগসাজসে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় বর্ণিত মোবাইলের কললিস্ট সংগ্রহক্রমে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল হক রনি জিডির বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইননুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে নিজেই সপরিবারে বিষপানে আত্মহত্যার হুমকি দেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ফেসবুক লাইভে এসে এ হুমকি দেন তিনি। এ সময় ৫০ মিনিট বক্তব্য দেন মেয়র কাদের মির্জা।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে আমি শেষবারের মতো বলছি, ঢাকা থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দেন। নোয়াখালী থেকে হলে একরাম-নিজামের কাছে বিক্রি হবে। ঢাকা থেকে ডিজিএফআই-এনএসআই এর চৌকস কর্মকর্তা আছেন, তাদের দিয়ে তদন্ত দেন। সেই তদন্তে যদি আমার ভাই শাহাদাৎ, ছেলে তাশিক ও আমিসহ অনুসারীরা অন্যায়কারী প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য। কারণ আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই অত্যাচার আর সইবো না, হয়তোবা পুরো পরিবারকে বিষ খেয়ে জীবন দিতে হবে। এটা ছাড়া বিকল্প পথ নাই। আগে বলেছি আল্লাহর দিকে তাকানো ছাড়া উপায় নাই, এখন বলছি বিষ খেয়ে জীবন দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে বিষ খেয়ে বুকের ওপর লিখে রাখব সে কথা; তা এখন বলব না। আমি রমজান মাসে লাইভ থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম কিন্তু বারবার আমার ওপর হামলা হলেও আমি কোনো প্রতিকার পাইনি। আমার পরিবারের ওপর অত্যাচারের কোনো প্রতিকার পাইনি।’
শুক্রবার বিকেলে ফের লাইভে আসেন মির্জা। বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে নিজের অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের লোকজন দিয়ে আমাকে পেটাবেন, মেরে ফেলবেন? ফেলুন। মনে রাখবেন- কোম্পানীগঞ্জের মাটিতে আপনি আসতে পারবেন না। প্রয়োজনে আমার রক্ত ঝরবে, আমার পরিবারের সদস্যদের রক্ত ঝরবে তবুও আপনাকে কোম্পানীগঞ্জের মাটিতে আসতে দেব না। আমার বিরুদ্ধে এখানে পুলিশ ও সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছেন। নিজের দুর্নীতিবাজ স্ত্রী ইসরাতুন্নেছা কাদেরকে বাঁচাতে তিনি ব্যস্ত কিন্তু তার স্ত্রী বাঁচতে পারবে না। ওবায়দুল কাদের তার কি স্বার্থ, সে-কি চাই, আমাদেরকে হত্যা করতে? এটার পরিণতি অত্যান্ত ভয়ানক হবে, বলে দিচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেছা কাদেরকে উদ্দেশ করে কাদের মির্জা বলেন, ‘আপনার (ওবাদুল কাদের) স্ত্রী ২০ লাখ টাকা দামের শাড়ি পরে, আর আমার গরিব মানুষ ২০০ টাকার জন্য ছেড়া কাপড় পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এটা কি চলতে দেওয়া যায়, এ জন্য কি বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছে?’
কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরী ও ফেনীর নিজাম উদ্দিন হাজারীকে এমপি পদে দলীয় নমিনেশন দিলে প্রমাণ হয়ে যাবে- আওয়ামী লীগ অপরাজনীতি করে। আমার মনে হয়- আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে আর প্রার্থী দিবেন না। ’এসময় কোম্পানীগঞ্জের সবাইকে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান আবদুল কাদের মির্জা।