নারীদেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ হলো জরায়ু, যা মাতৃত্ব ও নারীত্বের জন্যও অপরিহার্য অঙ্গ। অনেক নারীর এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি আক্রান্ত হয়ে পড়ে টিউমারে। জরায়ুতে সৃষ্ট টিউমারের আরেক নাম ইউটেরিন ফাইব্রয়েড (uterine fibroids), সংক্ষেপে ফাইব্রয়েড। এটি অতি পরিচিত স্বাস্থ্যসমস্যা। এ রোগের বিশেষ কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। জরায়ু টিউমারের কারণে মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত পিরিয়ড, তলপেট ফুলে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা এবং মূত্রতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই লক্ষণ প্রকাশমাত্র চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
ফাইব্রয়েড : নারীর প্রজনন বয়সে জরায়ুতে সবচেয়ে বেশি যে টিউমার হতে দেখা যায় তা হলো- ফাইব্রয়েড বা মায়োমা। জরায়ুর পেশির অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে এ টিউমার সৃষ্টি হয়। জরায়ুতে মাংশল অংশের অনিয়মিত বৃদ্ধিই হলো জরায়ু টিউমার বা ফাইব্রয়েড। এটি ইউটেরিন মায়োমা (uterine myoma) ফাইব্রো মায়োমা, লিইওমায়োমা নামেও পরিচিত। জরায়ু টিউমার বিভিন্ন আকারে হয়ে থাকে। ছোট টিউমার দেখতে মটরশুটির দানার সমান এবং বড় আকারের টিউমার কখনো কখনো বড় তরমুজের সমান হতেও দেখা যায়। টিউমারের আকার সময়ের সঙ্গে বড় বা ছোট হতে বা কখনো মিলিয়ে যেতেও দেখা যায়।
যাদের হয় : সাধারণত ৩০-৫০ বছর বয়সী নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং বংশপরম্পরায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সাধারণত একজন নারী একটি টিউমারে আক্রান্ত হলেও কখনো কখনো কাউকে কাউকে বিভিন্ন আকারের একাধিক টিউমারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সাধারণত ৭০ কেজির বেশি ওজনের নারীর ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ধারণা করা হয়, ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধিজনিত কারণে র্দীর্ঘদেহী নারীরা জরায়ু টিউমারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
রোগের কারণ : জরায়ু মসৃণ পেশি কোষ দিয়ে তৈরি। এ কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধিই জরায়ুতে টিউমার বা ফাইব্রয়েড তৈরি হয়। ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন সংবেদনশীল হরমোন ইস্ট্রোজেনের জন্য ফাইব্রয়েড হয়। শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে টিউমারের আকার বৃদ্ধি পায়। যেমন-গর্ভকালীন ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি। শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে টিউমারের আকার সংকুচিত হয়। যেমন- মেনোপজের পর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়া। হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি hormon replacement therapy-এর জন্য মেনোপজের পর ফাইব্রয়েডের আকার সংকুচিত হতে দেরি হতে পারে।
রোগ নির্ণয় : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রুটিন চেকআপ বা অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ রোগ ধরা পড়ে।
চিকিৎসা : এ ক্ষেত্রে ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। তিনি রোগের পর্যায় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।