আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে দলটি। কমিটি নিয়ে বাণিজ্য ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব চাইলেই কাউকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন না। তবে যে কোনো কমিটির খসড়া করতে পারবেন তারা। এরপর ওই খসড়া দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠাতে হবে। খসড়া তালিকায় যাদের নাম থাকবে তাদের বিষয়ে নানা উপায়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। অনাপত্তি পেলে কেবল কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। আপত্তি থাকলে পরিবর্তন করা হবে।
কেন্দ্রের এ নির্দেশনার পর সদ্য দায়িত্ব পাওয়া কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। ব্যক্তিগতভাবে যাচাই-বাছাই করে খসড়া তালিকা তৈরি করছেন তারা। সবমিলিয়ে সব সংগঠনের পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন নীতি-নির্ধারকরা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এবার অতীতের মতো কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। একদম নির্ভেজাল, রাজনীতিতে যার কোন ধরণের কালিমা নেই, দলের জন্য নিবেদিত ও পরীক্ষিত নেতারা কমিটিগুলোতে স্থান পাবেন। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সেই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি সংগঠনকে ৭ দিন, ১৫ দিন ও এক মাস পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হচ্ছে। তাদের দেয়া তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে ক্লিন ইমেজকে গুরুত্ব দিয়ে। একইভাবে অন্যান্য পদগুলোতে রাজনৈতিকভাবে স্বচ্ছদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
প্রায় একই বক্তব্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও চারটি সংগঠনের সম্মেলনের সফল সমাপণীর মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় সম্মেলনে সামনে রেখে জনগণের কাছে ক্লিন ইমেজের বার্তা দিতে পেরেছি। আমরা নতুন-পুরাতনের সমন্বয়ে দলকে ঢেলে সাজাবো। টেকনোলজির সঙ্গে ট্র্যাডিশন, আইডিয়ালিজমের সঙ্গে রিয়ালিজম, মডার্নিটির সঙ্গে ফেইথ এর মধ্যে একটা ফাইন ব্যালেন্স করে আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাব। চলমান শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন নেতৃত্ব উপহার দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই কয়েকটি সংগঠনে নয়া নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আমাদের নেত্রী তার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের প্রাসঙ্গিকতা দেখানো হয়েছে। আগামী দুই বছর আমাদের অলস হয়ে ঘরে থাকার কোনো সুযোগ নেই। পুরো দুটো বছরেই আমাদের কর্মব্যস্ত থাকতে হবে। গত মাসের ৬ তারিখ থেকে আওয়ামী লীগ তাদের সগযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে। এরই অংশ হিসেবে ৬ই নভেম্বর কৃষক লীগের নতুন সভাপতি হিসেবে সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি নির্বাচিত হয়েছেন।
নতুন সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তা পালন করবো। বাংলার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে কৃষক লীগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে, একই সঙ্গে দলের কর্মসূচি সফল করতে দলীয় নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কৃষক লীগ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। নতুন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাদের উপর আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সেই আস্থার প্রতিদান দিতে আমরা প্রস্তুত। সারা বাংলার কৃষকদের সংগঠিত করে আরও শক্তিশালী হবে কৃষক লীগ। ৯ই নভেম্বর গঠন করা হয় শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি। এতে নতুন সভাপতি হয়েছেন ফজলুল হক মন্টু, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন কে এম আযম খসরু। এছাড়া কার্যকরী সভাপতি হিসেবে মোল্লা আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৬ই নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আনা হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগে। এতে সভাপতি পদে নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আফজালুর রহমান বাবু নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী তিন বছরের জন্য তারা সংগঠনের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে ইসহাক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক পদে আনিসুর রহমান নাঈম নির্বাচিত হন। ঢাকা দক্ষিণ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে কামরুল হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক পদে তারেক সাঈদ নির্বাচিত হয়েছেন। ২৩ শে নভেম্বর আলোচিত যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এতে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক হন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।
নির্বাচিত হয়েই যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, যুবসমাজ যেন হেট পলিটিক্স কালচার থেকে বেরিয়ে এসে জয় বাংলার কর্মী হিসেবে কাজ করে সেভাবেই কাজ করে যাবো। সম্পূর্ণ সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবো। কর্মী নয়, আপনারা আমার শক্তি হবেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতিতে চলমান কর্মসূচিকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করে তা সফল করতে কাজ করবেন বলেও জানান। সবশেষ ৩০শে নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হয়েছেন শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন এস এ মান্নান কচি। দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আবু আহমেদ মান্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন হুমায়ুন কবির। নতুন নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মানবজমিনকে বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের বার্তিা দিয়েছেন কিভাবে কমিটি গঠন করা হবে। যাদেরকে নিয়ে সংগঠন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই তালিকা পাঠানো হবে দলীয় সভাপতির কাছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। তারা জানান, অতীতে কমিটি গঠন নিয়ে নানা ধরনের বাণিজ্য হয়েছে। এবার আর সেটা হচ্ছে না। হওয়ার সুযোগও নেই।