ইংল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি মোটেও অবাক হননি। এই মেসিকে তিনি যখন চুল কালো ছিল তখন থেকেই চেনেন। পিটারের চুলে পাক ধরেছে বটে; কিন্তু মেসি আছেন আগের মতোই। তার ফ্রি-কিক, অ্যাসিস্ট ও গতি যুগের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও নিখুঁত হয়েছে। বার্সেলোনাকে দুহাত ভরে দিয়েছেন। এবার সময় এসেছে জাতীয় দলকে কিছু দেওয়ার। ইকুয়েডরকে এক মেসিই শেষ করে দিয়েছেন। আর্জেন্টিনা আবার কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠেছে।
মেসির ফ্রি-কিক গোল দেখে পিটার শুধু বলেছেন, ‘আর্ট অব পিকাসো’। এমন নয় এবারই প্রথম। মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে ৪টি ফাইনাল খেলেছেন। এর মধ্যে ৩টি ফাইনালেই মেসি একক নৈপুণ্যে দলকে তুলেছেন শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে। ভাগ্যদেবী ২০১৪ বিশ্বকাপেও সঙ্গে ছিলেন না। এবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আর মেসি ছন্দে থাকলে সেমিফাইনালে কলম্বিয়াকেও হারাবে তারা। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট ব্রাজিল। কারণ ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়নরা শেষ চারে খেলবে পেরুর সঙ্গে। অবশ্য যুদ্ধ সমানে-সমান হবে। ব্রাজিলেও রয়েছেন একজন- নেইমার। সেয়ানে-সেয়ানে লড়াইয়ের প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের।
কোপা আমেরিকার এই আসরে মেসি ৪ গোল ও ৪ অ্যাসিস্ট করেছেন। ৮টি গোলে তার নাম জড়িয়ে আছে। এ ছাড়া ইতিহাসের পাতায় তো আছেনই। দক্ষিণ আমেরিকানদের মধ্যে ৭৭ গোল নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন ব্রাজিলের তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি পেলে। মেসির গোলসংখ্যা এখন ৭৬টি। আর ২টি গোল করলে সে রেকর্ড ভেঙে যাবে। আন্তর্জাতিক দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৯ গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও আলি দায়ির।
মেসির বয়স এখন ৩৪। ২০২২ সালে কাতারের বিশ্বকাপ তিনি খেলবেন। সেটাই তার শেষ বিশ্বকাপ হবে। বার্সেলোনার হয়ে সব জিতেছেন তার ক্যারিয়ারে। ৬টি ব্যালন ডি’অর রয়েছে। এই কোপা আমেরিকা জিততে পারলে ৭ নম্বর ব্যালন ডি’অরও তিনি জিতবেন সে ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। লিজেন্ডারি এক ফুটবলারের একটি ট্রফি অবশ্যই দরকার আর মেসি এটা ডিজার্ভ করে; কিন্তু আর্জেন্টিনা দলে মেসিকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো খেলোয়াড় কম। ফলে একদিন অফ ডে থাকতেই পারে তার। সেই দিনটাই আগের ৩টি ফাইনালে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
ইকুয়েডরের ম্যাচটিতে হিসাব করলে দেখা যাবে মেসি একাই সব করেছেন। রড্রিগো ডি পলের গোলটির পাস মেসির কাছ থেকে এসেছে। ৮৪ মিনিটে মেসি ইকুয়েডরের ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন। এর পর বাঁদিকে মার্টিনেজকে বল বাড়িয়ে দেন। গোলরক্ষক তখন একা। সহজ গোল করেন মার্টিনেজ। বল সহজ করে দেওয়ায় মেসির কোনো জুড়ি নেই। যোগ করা সময়ে (৯০+৩) মেসি যখন ডি মারিয়ার ফাউল থেকে ফ্রি-কিক পেলেন, তখন সবাই নিশ্চিতই ছিলেন এটা গোল হবে; আর হয়েছেও সেটি। ক্যারিয়ারে এখন মেসির ৫৮টি ফ্রি-কিক গোল ক্লাব ও দেশের হয়ে। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রয়েছে ৫৬টি। ফ্রি-কিকেরও রাজা মেসি যেভাবে নিশ্চিতভাবে গোল করে চলেছেন, সেভাবে সবাই চাইবেন এবার কোপা আমেরিকা শিরোপাটাও নিশ্চিত হোক তার।