অনেক দিন হয় বার্সেলোনা ছেড়ে এলেও লিওনেল মেসির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বটা দৃঢ় আর অটুটই ছিল। কিন্তু কোপা আমেরিকার ফাইনাল সামনে রেখে বন্ধুত্বের সেই বন্ধন ছিন্ন করতে তৈরি নেইমার। বাংলাদেশ সময় রবিবার ভোরের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে নিজ মাথায় প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরতে এই ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা এমনই মরিয়া যে মেসির সঙ্গে বন্ধুত্ব ‘যায় যায়’ বলতেও দ্বিধা করেননি।
অনেকটা রসিকতার ছলে বললেও ফাইনালের আগুনে উত্তাপ ঠিকই টের পাওয়া গেছে নেইমারের এমন কথায়, ‘নরকে যাও।’ যাদের উদ্দেশ করে বলেছেন, তারা নেইমারের নিজ দেশেরই সমর্থকদের একাংশ, যারা ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় মেসির হাতে অন্তত একটি ট্রফি দেখার বাসনায় ব্রাজিল নয়, অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছে আর্জেন্টিনাকে। তাতেই ফুঁসে ওঠা ব্রাজিলের দশম শিরোপাস্বপ্নের মধ্যমণি বলছেন, ‘ব্রাজিলিয়ান পরিচয়টা আমার জন্য গৌরব ও ভালোবাসার। আমার সব সময়ের স্বপ্ন ব্রাজিলের জার্সিতে খেলছি এবং ভক্তদের গানে মুখর হচ্ছি। ব্রাজিলের বিপক্ষে যায়, এমন কিছুই আমি কখনো সমর্থন করিনি বা করবও না। হোক সেটি খেলায়, কোনো মডেলিং প্রতিযোগিতায় কিংবা অস্কারে।’
মেসি এবং নেইমার, দুজনের জন্যই এবারের কোপার শিরোপা হবে একরকম ‘অস্কার’ জেতার সমতূল্য কিছুই। সেই সঙ্গে তাঁদের সামনে হাতছানি পেলে ও ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও। তিন-তিনটি বিশ্বকাপ ট্রফি মাথায় তুলে ধরেছেন পেলে। একা পায়ে আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ম্যারাডোনা। কিন্তু দুজনের কেউই কখনো পাননি কোপা জয়ের স্বাদ। মেসি এবং নেইমারও না। এবার অন্তত একজনের সেই অপূর্ণতা ঘুচতে চলেছে। কে তিনি? মেসি নাকি নেইমার?
ব্রাজিলের সেন্টারব্যাক মারকিনোসের এমন লক্ষ্য হওয়াই খুব স্বাভাবিক, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে, ওর (মেসির) লক্ষ্য যাতে পূরণ না হয়। মেসির মতো আমাদেরও এমন খেলোয়াড় আছে, যার কিনা ট্রফিটা প্রাপ্য। যেমন—নেইমার। গত আসরে সে (২০১৯ সালে, ইনজুরির জন্য) ছিল না।’ পেরুকে সেবার ৩-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলের শিরোপাজয়ী দলের অংশ হতে না পারাটা নেইমারের আকুতি এবার বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো। অন্যদিকে মেসি তিন-তিনবার কোপার ফাইনাল খেলেও ট্রফি ছুঁতে পারেননি। ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬-র আসরে ফাইনালে হারের বেদনায় বিলীন মেসি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালও হেরেছেন জার্মানির কাছে। বারবার খুব কাছে গিয়েও তীরের নাগাল না পাওয়ার বেদনা ভোলার আরেকটি সুযোগ এবার আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরের সামনে।
তাঁকে নিজের দেখা সেরা ফুটবলারের মর্যাদা দিয়ে আসা নেইমার কিন্তু মেসির জন্য লিখতে চান আরেকটি ব্যর্থতার গল্পই, ‘আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমার দেখা সেরা খেলোয়াড়। আমরা দুজনে বেশ ভালো বন্ধুও। কিন্তু এখন আমরা ফাইনালে, আমরা একে অন্যের প্রতিপক্ষ। আমি এটি জিততে চাই, যা হবে কোপায় আমার প্রথম শিরোপাও। মেসিও অনেক বছর ধরেই জাতীয় দলের হয়ে একটি ট্রফি জিততে মরিয়া। আর যখনই কোনো ফাইনালে আমরা ছিলাম না কিন্তু আর্জেন্টিনা ছিল, আমি ওর জন্যই গলা ফাটিয়েছি। যেমনটি জার্মানির বিপক্ষে ২০১৪-র বিশ্বকাপ ফাইনালের সময়ও করেছিলাম।’
এবার সেই সুযোগ নেই। আবার এমন কোনো সুযোগও তো নেই যে দুজনকেই শিরোপা জিতিয়ে দেওয়ার। সেই বাস্তবতার কথাই মনে করিয়ে দিয়ে লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের জন্য মরিয়া নেইমার বললেন, ‘আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা অটুট কিন্তু জিতবে তো শেষ পর্যন্ত একজনই।’ মার্কা, এএফপি