রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ অপরাহ্ন

চমক নেই আ’লীগের তৃণমূল কাউন্সিলে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৮৮ বার

নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ ডিসেম্বর। এতে সভাপতি পদে দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক পুনরায় স্বপদে বহাল হয়েছেন। গত ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে আবার যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শহিদুল হক মিলন ও শাহীন চাকলাদার। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে সদর উদ্দিন ও আজগর আলী। এভাবে কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই সদ্য অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মাধ্যমে বেশির ভাগ জেলায় স্বপদে বহাল হয়েছেন পুরনোরাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিতর্কিত নেতাদেরও বাদ দেয়া হয়নি কমিটি থেকে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সর্বস্তরে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা হবে কেন্দ্র থেকে এমন বার্তা দেয়া হলেও কার্যত সারা দেশে পুরনো নেতৃত্বের ওপরই আস্থা রাখছে কেন্দ্র। তবে বিষয়টির সাথে খানিকটা দ্বিমত পোষণ করে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সম্মেলনের মাধ্যমেই তৃণমূলে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। এখানে নতুন-পুরনো বলে কোনো কিছু নেই। যারা সংগঠন পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছেন তাদেরই মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সবই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির মেয়াদে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার বেশির ভাগ জেলাতেই পুরনো নেতারাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল হয়েছেন। কোনো কোনো জেলায় সভাপতি আবার কোনো জেলায় সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় বহাল হয়েছেন কেউ কেউ।
তৃণমূল সূত্র অনুযায়ী, গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জহিরকে সভাপতি ও বর্তমান সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী এমপিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি হন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। একই দিনে অনুষ্ঠিত খুলনা জেলা সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশিদ পুনরায় সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারীকে ভারমুক্ত করা হয়। ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট জেলা সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমনকে ভারমুক্ত করা হয়। ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ফেনী জেলা সম্মেলনে বিতর্কিত এমপি নিজাম উদ্দীন হাজারীকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এ এইচ এম খায়রুল আনাম সেলিমকে পুনরায় সভাপতি এবং একরামুল করিম চৌধুরী এমপিকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে পুনরায় পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি জেলা সম্মেলনে কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরাকে পুনরায় সভাপতি এবং নির্মলেন্দু চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভারমুক্ত করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সুবাস চন্দ্র বোস ও নিজামউদ্দীন খান নিলুকে পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্বহাল হন ক্যশৈহা ও ইসলাম বেবী। এভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, রাজশাহী, সিলেট মহানগর, ঠাকুরগাঁও ও পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জেলা বাদে সব কমিটিতে পুরনোরাই বহাল রয়েছেন।

পুরনোদেরই নতুন কমিটিতে বহাল রাখা নিয়ে দলের মাঠকর্মীদের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে নেতৃত্ব পরিবর্তনের যে বার্তা কেন্দ্র থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তৃণমূল কমিটিতে তার প্রতিফলন তেমন একটা দেখা যায়নি। ঘুরে-ফিরে পুরনোদের ওপরই আস্থা রাখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এভাবে যদি পুরনোরাই নেতৃত্বে থাকবেন তাহলে সম্মেলন আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন করছেন তারা। তাদের মতে, সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলে নেতৃত্বের একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে দলের মধ্যে গ্রুপিং ও কোন্দল প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। ফলে অনেক স্থানে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘নিজাম হাজারীর অপকর্মের কথা কেন্দ্রের সবাই জানেন। এরপরও কেন্দ্রীয় নেতারা এসে তাকেই আবার জেলার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। দলে ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে কেন্দ্রের এরকম বুলি আসলে একটা তামাশা।’

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘পুরনোদের দায়িত্বে বহাল রাখতে হলে কেন্দ্র থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রেসে পাঠিয়ে দিলেই হয়। তাতে দলাদলিও হবে না, মারামারিও হবে না।’

তৃণমূল নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সর্বস্তরের নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস দেয়া হলেও সেটি না করে পুরনোদেরই নতুন করে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কোনো কোনো জেলায় দলীয় সংসদ সদস্যদের ইচ্ছার বাইরে যেতে পারছেন না সম্মেলনে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যেই বিতর্কিত অনেক নেতা ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ম্যানেজ করে হাস্যোজ্জ্বলভাবে এলাকায় ফিরে আসেন। আবারো বসেন স্বপদে। এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। দলীয় সংসদ সদস্যরা জেলা-উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন না কেন্দ্র থেকে এমন ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে এমপিরাও ঠাঁই পেয়েছেন।

তবে তৃণমূল নেতাদের এমন অভিযোগের সাথে দ্বিমত পোষণ করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, নতুন-পুরনো বলে কোনো নিয়ম নেই। সংগঠন পরিচালনায় দক্ষ ও যোগ্যদেরই নেতা বানানো হচ্ছে। আর সেটা সম্মেলনের মাধ্যমেই করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, নেতৃত্ব সরকারি চাকরি নয় যে তিন-পাঁচ বছর পর তাকে বদলি করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে কারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পেরেছেন আমরা জেলা সম্মেলনগুলোতে সেটাই দেখছি। এখানে পুরনো আর নতুন বলে কোনো নিয়ম নেই। তা ছাড়া কাউন্সিলরদের ভোটকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com