ক্রেসি সানরা। জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। কখনো বাংলাদেশে যাননি এ ব্রিটিশ নাগরিক। কিন্তু যে রাস্তা ধরে প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করেন সে রাস্তার একটি বাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দেখেন তিনি। ক্রেসি জেনেছেন, এটি শুধু ভাস্কর্য নয়, বাঙালি জাতির আবেগ, ইতিহাস। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাঙালি জাতির পিতা।
সানরার মতো অনেকে এ পথ ধরে চলতে চলতে একটু থামেন। শ্রদ্ধা অবনত হয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। ভিন দেশি অনেক নাগরিকও দাঁড়িয়ে জেনে নেন বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বাঙালিদের কাছে এ জায়গাটি বিশেষ স্থানে পরিণত হয়েছে।
মা-বাবার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে এসেছে ১১ বছরের ব্রিটিশ বাংলাদেশি অর্পিতা। জন্ম যুক্তরাজ্যে। মা-বাবার মুখে শুনেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। যখন জানতে চাইলাম বঙ্গবন্ধুকে চিনে কিনা মাথা নেড়ে বলল, বাবার মুখে অনেক গল্প শুনেছে, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। ইউটিউবে ভাষণ শুনেছে। কম্পিউটারে ছবিও দেখেছে।
যুক্তরাজ্যে বসবাসকারীসহ কোটি মানুষের স্বপ্নের বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করেন আফসার খান সাদেক নামের একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি। নিজ বাড়ির সামনে পিতলের রঙের পাথরে তৈরি ভাস্কর্যটি যেন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। একই সঙ্গে প্রিয় নেতা, প্রিয় মানুষের অবয়ব দেখার কিছুটা হলেও সুযোগ তৈরি করেছে হাজারও মানুষের মধ্যে।
বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের বিষয় আফসার খান সাদেক বলেন, এটি অন্যরকম এক অনুভূতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু কতটা জনপ্রিয় তা না দেখলে বোঝা যায় না। অনেকে এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মনে হয়, কাছ থেকে আমাদের নেতাকে দেখছেন। এ সিডনি স্ট্রিট এখন বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ জায়গায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সফরে আসা মন্ত্রী, এমপি, নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি দেখতে। একই সঙ্গে প্রতিদিন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষও দেখতে আসেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে। ভাস্কর্যটির ডিজাইনের কাজ করেছেন ভারতের বিখ্যাত প্রতিকৃতশিল্পী পায়েল চক্রবর্তী। ২০১৬ সালে কার্গো শিপমেন্টের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করেন আফসার খান সাদেক। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এটিকে স্থাপন করতে সময় লাগে। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন ভাস্কর্যটি।
আবক্ষ মূর্তিটি হ্যারি জ্যাকসন নামের একটি ট্যুর গাইড কোম্পানির ইস্ট লন্ডনের দর্শনীয় বিষয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে। তারা তাদের প্রতি রবিবারের ট্যুরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ট্যুরিস্টদের ইস্ট লন্ডনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখাতে নিয়ে এলে সিডনি স্ট্রিটে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর মূর্তির সামনে ২০ মিনিটের একটি সেশন করে। সেখানে ২০-২৫ জন ভিন্ন ভাষাভাষী, সংস্কৃতির মানুষ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানেন। এ সময় আফসার খান সাদেকও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এভাবেই একজন জাতির জনকের জীবনীর ফেরিওয়ালা হয়ে গর্ব বোধ করেন আফসার খান সাদেক।
আফসার খান সাদেক বলেন, তিনি যে বাড়িটির সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন, সেই বাড়িটিকে তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে জাদুঘর করতে চান। একই সঙ্গে ছয় রুমের সেই বাড়িতে গেস্ট হাউসেরও ব্যবস্থা করতে চান। যাতে বাংলাদেশ থেকে আসা বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা সেই বাড়িতে এসে থাকতে পারেন।