নিউইয়র্কের কতিপয় ব্যক্তির দায়ের করা প্রতারণা মামলায় জেকব মিল্টন নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। বিগত ২০০৭ সালের দায়ের করা ঐ মামলাটির আইনী লড়াই ম্যানহাটান সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। ম্যানহাটান সুপ্রীম কোর্টের প্রদত্ত রায়ে তিনি (জেকব মিল্টন) জয়ী হন। এদিকে প্রতারণা মামলার অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে জেকব মিল্টনের পাল্টা দায়ের করা মানহানী মামলায় অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ১২.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৭ আগষ্ট) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নিজের অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেকব মিল্টন উপরোক্ত তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেকব মিলন্টন বলেন, ২০০৬ সালে গ্রীফিন মর্টগেজ ব্যাংকে কর্মরত কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে। তথাকথিত সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই আমাকে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিলো অভিযোগকারী মায়রা মেসিয়াস, জুয়ান বি আলভারেজ, জুয়ান সি আলভারেজ ও হেক্টর স্যান্ডেভাল-এর পরিচয় চুরি করে একাধিক বাড়িঘর ক্রয়, তাদের নামে ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে হোম ডিপোতে শপিং এর মাধ্যমে অভিযোগকারীদের এক মিলিয়ন ডলার ক্ষতি প্রভৃতি। জেকব মিল্টন অভিযোগ করে বলেন, উল্লিখিত অভিযোগকারীরা নূর মোহাম্মদ নামের এক বাংলাদেশীর সাথে ব্যবসায়িক চুক্তির ভিত্তিতে যৌথভাবে কিছু বাড়িঘর ক্রয় করে। কিন্তু অভিযোগকারীরা ঐ চুক্তির বিষয়টি লুকিয়ে রেখে জেকব মিল্টন-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং তার পরদিনই কোন প্রকার তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তৎকালীন কুইন্স কাউন্টির ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী রিচার্ড ব্রাউন (প্রয়াত) আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে সংবাদ সম্মেলন করে। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু অভিযোগ ছিলো সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট ও মিথ্যা।
পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে মামলাটি ডিসমিস করার জন্য আমার (জেকব মিল্টন) কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু আমি তা প্রত্যাখ্যান করলে আমাকে ‘টেরোরিষ্ট মামলা’য় আটকের হুমকি সহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী আমার বোন ও তার সন্তানকেও স্পর্শকাতর অভিযোগে আটকের ভয় দেখায়। এমনকি তদন্তকারী কর্মকর্তারা এক পর্যায়ে আমাকে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের বারান্দায় অ্যাম্বুশ করে জোর পূর্বক কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তিনি বলেন, তখন সদ্য পাশ হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘পেট্রিয়ট আইন’-এর ভয়ে এবং চাপের মুখে আমার বোন ও সন্তানের কথা ভেবে সব মেনে নিতে হয়। পরবর্তীতে ‘জেকব মিল্টন অপরাধ স্বীকার করেছে’ মর্মে নিউইয়র্কের বাংলা ভাষার দুটি মিডিয়া সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবরটি প্রকাশিত হয়।
জেকব মিল্টন বলেন, এরপর আপিলেট ডিভিশন সেকেন্ড ডিপার্টমেন্টে আমার বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগটি চ্যালেঞ্জ করলে আপীলেট ডিভিশন আমার বিরুদ্ধের ‘কনভিকশন’টি ডিসমিস করে দেয়। তিনি বলেন, মূলত: আমার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলার অভিযোগকারীরাই প্রতারণা করেছে এবং অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই আমাকে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছিল। অভিযোগকারীরা ব্যবসায়ীক চুক্তির মাধ্যমে বাড়ি ক্রয় করার পর নিজেরাই ঐ বাড়ীগুলোতেই বসবাস করতো এবং নিজেরাই মর্টগেজ পে করার পরেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তারা বাড়ী ক্লোজিং-এর সময়ও উপস্থিত ছিল। মিডিয়ায় প্রকাশিত এ ধরণের একটি মামলায় ‘কনভিকশন’ পেলে তার ক্যারিয়ার এর উন্নতি হবে চিন্তা করে মামলার প্রসিকিউটর অনেক ডকুমেন্ট লুকিয়ে রেখেছিলো বলে জেকব মিল্টন অভিযোগ করেন।
জেকব মিলন্ট বলেন, আমার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে বলা হয়েছে যে, আমি অন্যের নামে ক্রেডিট কার্ড করে হোম ডিপোতে শপিং করেছি। অভিযোগকৃত ট্রানজেকশনে মাত্র ৩৯ ডলারের শপিং করা হয়েছে। আর শপিং ভিডিও-তে আমি নই, দু’জন আফ্রিকান পুরুষ ও নারীকে দেখা যায়।
এক প্রশ্নের উত্তরে জেকব মিল্টন বলেন, কুইন্স কাউন্টি’র কোন কোর্টে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয় বিবেচনা করেই ম্যানহাটন সুপ্রীম কোর্টে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ম্যানহাটন সুপ্রীম কোর্টে জেকব মিল্টন-এর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের আনীত অভিযোগ মিথ্যা এবং জুরীদের রায়ে তিনি (জেকব মিল্টন) নির্দোষ প্রমাণিত হন বলে জানান। বর্তমানে তিনি কুইন্স কাউন্টি ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ঐ মামলাতেও তিনি জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে উক্ত মামলার রায় নিয়ে নিউ ইয়র্ক পোষ্ট একটি ‘বিকৃত সংবাদ’ প্রচার করায় তার (জেকব মিল্টন) এটর্নীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্ক পোষ্টকে রিজয়েন্ডার দেয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পত্রিকাটির কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।