জাতীয় পার্টির (জাপা) ত্রিবার্ষিক নবম জাতীয় সম্মেলন আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাপার মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ সম্প্রতি শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য, পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে যুক্ত থাকার কারণে জাপার বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রতি দলে ও দলের বাইরে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
জাপা নেতাদের ভাবনা, কারও ব্যক্তিগত কারণে দল বিতর্কের মুখে পড়ুক এটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কেউ চান না। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদসহ দলীয় সভা-সমাবেশে রাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। আড়ালে-আবডালে রাঙ্গার বিরুদ্ধে কথা বলছেন দলের আরও বেশ কয়েক জন নেতা। ফলে রাঙ্গার পরিবর্তে অন্য কাউকে মহাসচিব পদে আনার জন্য দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। যদিও নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তৎপর আছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।
দলীয় সূত্র বলছে, মহাসচিব পদে আলোচনায় রয়েছে বেশ কয়েক জনের নাম। এর মধ্যে জাপার সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম মেম্বার মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশিদসহ বেশ কয়েক জনকে নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু পদপ্রত্যাশীর দৌড়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। মূলত তৃণমূল এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়ার কারণেই নিজেদের অবস্থানে তারা এগিয়ে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া ও ব্যবসায় পূর্ণ মনোযোগ থাকার কারণে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর পদোন্নতি ব্যাহত হতে পারে। আর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে মহাসচিব পদের দৌড়ে পিছিয়ে আছেন ফিরোজ রশিদ।
জানা গেছে, এই পদপ্রত্যাশীরা নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে না বললেও দলীয় অফিসে, জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বাসায়, সংসদে এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বাসায় প্রায়ই ধরনা দিচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের সবাই বলছেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা তারা মেনে নেবেন।
জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কিংস পার্টিতে ছিলেন কাজী ফিরোজ রশিদ। চারদলীয় জোটের শরিক বিজেপির মহাসচিব হিসেবেও ছিলেন তিনি। ফলে তার বিষয়ে দলে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে আছে। সে কারণে তাকে এই পদে আনার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
দলের অন্য এক নেতার ভাষ্য, বিএনপির নিষ্ক্রিয় রাজনীতির কারণে জাপার পথ এখন অনেকটা পরিষ্কার। এ অবস্থায় মহাসচিব পদে স্মার্ট ও কমিউনিকেটিভ একজন নেতার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে এই পদে পরিবর্তন জরুরি। এ বিষয়ে জাপার পরিকল্পনা জানতে চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।