ভারতের কেরলে চার বোন একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, একই ছাদের নিচে তাদের জীবন কাটিয়ে চলছেন তারা – তারা একই খাবার খান এবং একই ধরণের পোশাক পরেন – এমনকি ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে একই সারিতে বসতেন। এখন চারজন বোন একই দিনে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। বোনরা বলছেন তারা বেশিরভাগ সময় এখন বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
এই চার বোনের একটি ভাই রয়েছে। এই পাঁচ ভাইবোন একই সাথে পৃথিবীর মুখ দেখে। একসাথে জন্ম নেয়া পাঁচ শিশুকে মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় কুইন্টুপ্লেটস।কুইন্টুপ্লেটস ভাই-বোন হওয়ায় জন্মের দিন থেকেই সবার আলাদা নজরে থেকে অভ্যস্ত তারা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো তাদের কষ্ট ও দুর্দশাগ্রস্ত জীবনের গল্প নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতো।
চার বোন উথ্রাজা, উথারা, উথামা, উথ্রা ও তাদের ভাই উথ্রাজন জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৯৫ সালের ১৮ নভেম্বর, এবং সামনের বছর ২ এপ্রিল এই চার বোন একসাথে বিয়ের পরিকল্পনা করছেন।
উথারা বলেন, আমাদের বাড়িতে বেশিরভাগ কথাবার্তাই এখন বিয়ের বিষয় নিয়ে হয়। আমরা এখনও আমাদের সেই বিশেষ দিনটির জন্য সিল্কের শাড়ি কিনতে পারিনি। তবে আমরা একই নকশা এবং একই রঙের শাড়ি কিনবো।তিনি নিজে সাংবাদিক এবং তার হবুও স্বামীও সংবাদ প্রতিবেদক।
বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় রীতি-রেওয়াজ এবং ঐতিহ্যকে ধরে রেখে। সে হিসেবে এখানে বর-কনে নিজেরা নিজেদের বেছে নেয়ার পরিবর্তে পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা ঘটকের ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তাদের মা রেমা দেবী বিবাহ ম্যাচমেকিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার মেয়েদেরকে নিজেদের স্বামী বাছাই করে নিতে সাহায্য করেন।
এই ধরণের বিবাহ সাধারণত একই বর্ণের, একই অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন সদস্যদের মেলবন্ধন করে।
জ্যোতিষীরা নববধূ ও কনের রাশিফলগুলো পরীক্ষা করে এবং তাদের পরিবারকে জানায় যে সত্যিই তাদেরকে একে অপরের জন্য তৈরি করা হয়েছে কি-না। তবে এসব কোনো জোরপূর্বক বিয়ে নয় – বর ও কনেদের নিজেদের মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
সেপ্টেম্বরে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার কারণে চারজন বরের মধ্যে তিনজন বাগদানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। দেখতে আলাদা এই কুইন্টুপ্লেটস বোনরা এখন চেষ্টা করছেন যে তাদের বিবাহের সমস্ত আয়োজন দেখতে যেন একরকম হয়।
এই মেয়েরা জন্ম থেকেই সব কিছু একসাথে করেছে, যদিও তারা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতাও করতেন এবং এ কারণেই তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব স্বতন্ত্র। উথ্রা, পড়াশোনায় পারদর্শী। উথামার আগ্রহ সংগীতে এবং বেহালা শিখতে শুরু করেছিলেন, তাদের ভাই উথ্রাজন তবলায় আগ্রহী। উথ্রা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। উথ্রাজা ও উথামা অ্যানেসথেশিয়া টেকনিশিয়ান হয়ে উঠেছে।
যখন তারা নিজেদের জন্য স্বামী খুঁজতে করতে শুরু করেন, উথ্রাজা প্রথম তার জন্য একজন সঙ্গী খুঁজে পেয়েছিলেন, তাও সেটা প্রায় এক বছর আগে। তবে তিনি তাড়াহুড়ো না করার সিদ্ধান্ত নেন।
জীবনের নতুন এক অধ্যায়ে পা রাখা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বাকি বোনেরাও, এবং ভাই উথ্রাজনও খুশি – যদিও গাঁট বাঁধতে এই একমাত্র ভাইয়ের কোনো তাড়াহুড়ো নেই – পারিবারিক জীবন শুরু করার আগে তিনি কয়েক বছর বিদেশে গিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
সূত্র : পূবের কলম