শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন

কাল শেষ হচ্ছে ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ, নতুন কমিটির গুঞ্জন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৩৪ বার

আগামীকাল শনিবার মেয়াদ শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল। তাদের নেতৃত্বেই হয় ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আজও। তবে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই উঠেছে নতুন কমিটির গুঞ্জন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনটির একটি অংশ চায় স্বল্প সময়ের জন্য হলেও একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হোক। অন্য একটি অংশের মত পূর্ণাঙ্গ কমিটির। তাদের দাবি, সামনে আন্দোলনের কর্মসূচি দিবে দল। এসময় আহ্বায়ক কমিটি হলে আন্দোলন ব্যহত হবে।

ছাত্রদলের নতুন কাউন্সিল নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের ভাবনা :

নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হবে কিনা জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা ২০১৯ সালে যখন কাউন্সিল করেছিলাম তখন আমাদের স্পিড ছিল কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন করা। কিন্তু আমাদের ওই কাউন্সিল হওয়ার পরপরই করোনা মহামারীর কবলে পুরো দেশ স্থবির হয়ে পড়ে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। আর ছাত্রদল তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক সংগঠন। তাই এই কমিটি যে খুব বেশি একটা কাজ করতে পেরেছে সেটা বলা যাবে না। তারপরও আমাদের দলের সিদ্ধান্ত যত দ্রুত সম্ভব সকল কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করা। তাই আমি মনে করি ছাত্রদলের কাউন্সিলের বিষয়টিতেও একটি সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

আহ্বায়ক কমিটি হবে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে এই প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, এটা পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। জরুরি অবস্থায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়ে থাকে। আর স্বাভাবিক সময় কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটিই হয়ে থাকে। এখন দলের প্রয়োজনে কোনটা ভালো হবে সেটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেবেন।

দ্রুত ছাত্রদলের কাউন্সিল হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, করোনা মহামারীর কারণে আমাদের সকল রাজনৈতিক সংগঠনের অনেক কাজই ব্যহত হয়েছে। সে কারণে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতেও অনেকটা দেরি হয়েছে। তবে আমি আশা করি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।

সামনে আহ্বায়ক কমিটি হবে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। এবার আহ্বায়ক কমিটি হবে না পূর্ণাাঙ্গ কমিটি হবে সে বিষয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সময় ও সবদিক চিন্তাভাবনা করে সংগঠনের জন্য যেটা ভালো হয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাই করবেন।

নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হবে কিনা জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, মেয়াদ শেষে অবশ্যই নতুন কাউন্সিল হবে। এটাই বাস্তবতা ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সেটা কখন কিভাবে হবে তা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ অন্যদের সাথে আলোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিবেন।

নতুন কমিটিতে আলোচনায় যারা :

নতুন আহ্বায়ক কমিটি হলে আহ্বায়ক প্রার্থী হিসেবে ছাত্রদলের মধ্যে আলোচনায় আছেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র সহ সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন,সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ সভাপতি আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, তানজিল হাসান প্রমুখ।

সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় আছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, মহিউদ্দিন রাজু, রিয়াদ ইকবাল, শ্যামল মালুম, মারুফ এলাহী রনি প্রমুখ।

২০০২ সালে এসএসসি ক্রাইটেরিয়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে সভাপতি হিসেবে আলোচনায় আছেন, সাঈফ মাহমুদ জুয়েল, তানজিল হাসান, মহিউদ্দিন রাজু, শাহ নেওয়াজ প্রমুখ।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, রিয়াদ ইকবাল, শ্যামল মালুম, মারুফ এলাহী রনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন প্রমুখ।

আলোচনায় থাকা নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয় :

ইকবাল হোসেন শ্যামল : তিনি বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক। নানা প্রতিকূলতার মাঝে দু’বছর ছাত্রদলকে পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার ভালো অবস্থান রয়েছে।

কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ : তিনি বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। ষষ্ঠ কাউন্সিলে সভাপতি পদে মাত্র ৮ ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় থেকেই বেশ আলোচনায় রয়েছেন শ্রাবণ। নেতাকর্মীদের মধ্যেও তার ভালো অবস্থান রয়েছে।

আমিনুর রহমান আমিন : তিনি বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে সংগঠনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। নেতাকর্মীবান্ধব এই নেতাকে নিয়ে দলের একটি অংশের আগ্রহ রয়েছে। সংগঠনের কর্মীদের মাঝে তার সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। এছাড়াও কমিটি গঠনে তার সততার সুনাম রয়েছে দলের হাইকমান্ডের কাছে।

সাইফ মাহমুদ জুয়েল : তিনি বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। স্লোগান মাস্টার হিসেবে পরিচিত জুয়েল দলের দুর্দিনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে তৃণমূলের আস্থার জায়গায় রয়েছেন। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সক্রিয় অবস্থান আর ঝুঁকি নেয়ার কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীর মাঝে তিনি ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এছাড়াও কমিটি গঠনে তার সততার সুনাম রয়েছে দলের হাইকমান্ডের কাছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

আশরাফুল আলম ফকির লিংকন : তিনি বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। তিনি ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছিলেন। একাধিক মামলাও রয়েছে তার।

তানজিল হাসান : তিনি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে সংগঠন পরিচালনার যোগ্যতা ও কর্মী রয়েছে তার।

মহিউদ্দিন রাজু : বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তিনি। বর্তমান সভাপতির আস্থাভাজন হওয়ায় ও নিজস্ব কর্মীবাহিনী থাকায় তাকে নিয়েও অনেকের আগ্রহ রয়েছে।

শাহ নেওয়াজ : বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে সংগঠন পরিচালনার যোগ্যতা রয়েছে তার। আন্দোলন সংগ্রামেও তিনি সক্রিয়।

রিয়াদ ইকবাল : তিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও (ঢাকা-খ) বিভাগীয় টিমের সদস্য। এই নেতার বিষয়েও অনেকের আগ্রহ রয়েছে। জানা যায়, বিভাগীয় টিমে সততার সাথে কাজ করে তারেক রহমানের আস্থা অর্জন করেছেন।

রাকিবুল ইসলাম রাকিব : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক হিসেবে রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতাকর্মীদের মাঝে ভালো পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও দলীয় সকল কর্মসূচিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ স্বীকৃত। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে কিছুদিন আগেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া তরুণ এই নেতার বিষয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে।

মারুফ এলাহী রনি : তিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। দলীয় কর্মসূচিতে তাকে অংশ নিতে দেখা যায়। একাধিক দলীয় মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে তার বড় ভাই হাবিব এলাহি রুবেল তেঁজগাও থানা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক। ডিএনসিসি নির্বাচনের সময় তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচরণায় বাংলামটর এলাকাতে বিএনপি চেয়ারপাসনের গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ রয়েছে তার বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

শ্যামল মালুম : তিনি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। বরিশাল বিভাগীয় টিমে দায়িত্বপালনকালে নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে বরিশাল টিম থেকে বাদ দেয়া হয়।

নতুন কাউন্সিলের বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, সংগঠন আহ্বায়ক কমিটি করবে না পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে সেটা ঠিক করবে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। সংগঠনের স্বার্থে কাকে কোথায় রাখবেন সেটাও তিনি নির্ধারণ করবেন। সংগঠনের ভালোর জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত জানাবেন আমি সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবো।

নতুন কাউন্সিলের বিষয় জানতে চাইলে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, সংগঠনের ধারাবাহিকতা ও গতিশীলতা রক্ষার্থে সবসময়ই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করা উচিত। আর দায়িত্বে থেকে যারা সংগঠনকে সফলভাবে পরিচালনা করবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা এবং ব্যর্থ হলে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। নতুন কমিটি হলে আহ্বায়ক প্রার্থী হবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নিবেন।

ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন নয়া দিগন্তকে বলেন, কাউন্সিল নিয়ে ভাগ ভাগ করে আলোচনা হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তবে নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল হওয়ার পক্ষে তিনি। নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হলে প্রার্থী হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতির উপরে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই কাউন্সিল চাই। তবে কাউন্সিল হবে না স্বল্পকালীন আহ্বায়ক কমিটি হবে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের দলের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমানের উপর ছেড়ে দিতে চাই। আর কাউন্সিল হলে যদি বয়সসীমা থাকে তাহলে অবশ্যই প্রার্থী হবো।

যুগ্ম সম্পাদক মাইনুদ্দিন রাজু বলেন, একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে নিয়মিত কাউন্সিল হোক সেটা আমরা চাই। তবে এ বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত নিবেন আমাদের অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি জানান, আমাদের এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এবং কিছু কিছু ইউনিট কমিটি বাকি আছে। খুব শিগগিরই সেগুলো হয়ে যাবে। আর কাউন্সিল হলে যদি বয়সসীমা থাকে তবে অবশ্যই প্রার্থী হবো।

ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ ইকবাল বলেন, আমি নির্দিষ্ট সময় কাউন্সিল হওয়ার পক্ষে। তবে কাউন্সিল কখন কিভাবে হবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আমাদের অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর। আর কাউন্সিল যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেনো আমি একজন প্রার্থী হিসেবে ওই কাউন্সিলে অংশ নিবো।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com