আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালির সবচেয়ে বড় অর্জনের দিন, উৎসবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি বিশ্বে আপন পরিচয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানের বর্বর হানাদারদের পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল সারা দেশ।
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের ও গৌরবের দিন এই ১৬ই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি পেয়েছিল তার বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা; পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়েছিল প্রিয় স্বদেশ। ৪৮তম বিজয় দিবসে দাঁড়িয়ে আমরা স্মরণ করছি সেসব শহীদকে, যাঁরা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই লাল-সবুজের পতাকা দিয়েছেন। স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদকে, যাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। স্মরণ করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। আমরা ঋণী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, তাজউদ্দীন আহমদসহ সে সময়ের আরো অনেক নেতা-নেত্রীর কাছে। তাঁরা মুক্তির পক্ষে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে হয়েছিল। আর সে ক্ষেত্রে আমাদের বড় ঋণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র আহ্বানেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চূড়ান্ত মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল। যেসব স্বপ্নে তাড়িত হয়ে লাখ লাখ মুক্তিসেনা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তার অনেকই আজও পূরণ হয়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি পুরোপুরি আসেনি। দেশ পুরোপুরি রাজাকারমুক্তও হয়নি। তাই দিনটি নতুন প্রত্যয়েরও। ৪৮তম বিজয় দিবসে আমাদের শপথ হোক—সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ধরে এগিয়ে যাওয়া; একাত্তরের নরঘাতকদের যে বিচার চলছে তা এগিয়ে নেওয়া; সুখী, সমৃদ্ধ ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একাত্তরে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীতে থাকা ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পর্যায়ক্রমে পুরো তালিকা প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘জনদাবি’ থাকলে এই তালিকা ধরে গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে একাত্তরে প্রাণ হারানো দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদসন্তান ও মুক্তিযোদ্ধারা।
আজ মহান বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক, ষড়যন্ত্রের জাল আমরা ছিন্ন করবই। একাত্তরের নরঘাতকদের বিচার চালিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে হবে। সুখী, সমৃদ্ধ ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হোক আজকের অঙ্গীকার। বিজয় দিবসে আমাদের অগণিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ীর প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।