অবশেষে কোভিশিল্ড কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দিলো বৃটেন। বুধবার এ নিয়ে দেশটির আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নির্দেশনা আপডেট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড কার্যকরী ভ্যাকসিন হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে। সমপ্রতি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে জটিল ট্রাফিক লাইট পদ্ধতি বাতিল করে নতুন নিয়ম চালু করেছে বৃটেন। আগামী ৪ঠা অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে চলা এই নিয়মের অধীনে ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে আরও সতেরোটি দেশের যেসব নাগরিক করোনা ভ্যাকসিনের সবগুলো ডোজ নিয়েছেন তাদেরকে ‘ডবল ভ্যাকসিনেটেড’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে সে তালিকায় প্রথমে ঠাঁই পায়নি বাংলাদেশ কিংবা ভারত। এরফলে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ দেয়া হলেও বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের বৃটেন প্রবেশের পর ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম কার্যকরী ছিল। তবে ভারত সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে এমন পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায়।
হুমকি দেয় পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণেরও। এরই একদিনের মাথায় সংশোধন করে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনকে মান্যতা দিলো বৃটেন।
সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত এই ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি না দেয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বৃটেনকে। এই ভ্যাকসিন বৃটেনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং সেদেশের নাগরিকদের মধ্যেও এটি প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা কড়া প্রতিবাদ জানান। বৃটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে বৈঠকে এই ইস্যু তোলেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। তখনই দিল্লিতে থাকা বৃটিশ হাইকমিশন থেকে আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছিল, ভারত সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছে বৃটেন। এরই একদিনের মাথায় কোভিশিল্ডকে অনুমোদিত ভ্যাকসিনের তালিকায় যুক্ত করা হলো। এরফলে এখন থেকে কোভিশিল্ডের উভয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করাদের আর বৃটেনে প্রবেশের পর ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন নিয়ম মানতে হবে না।
যুক্তরাজ্যের পরিবহন দপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা দপ্তর থেকে এ নিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাক্সজেভ্রিয়া এবং মডার্না টাকেডা কার্যকরী ভ্যাকসিন হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। বৃটেনে প্রবেশ করতে হলে সবাইকে অবশ্যই কমপক্ষে ১৪ দিন পূর্বে অনুমোদিত যেকোনো ভ্যাকসিনের পূর্ণ ডোজ সমপন্ন করতে হবে। এ ছাড়া কোয়ারেন্টিন নীতিতে নতুন এই আপডেটের ফলে কোভিশিল্ড গ্রহণ করাদের আর পিসিআর পরীক্ষার মধ্যদিয়ে যেতে হবে না।
শুক্রবার বৃটেন যখন কোভিশিল্ডকে স্বীকৃতি না দিয়েই নতুন কোয়ারেন্টিন নীতি ঘোষণা করলো তখন এর পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল নয়াদিল্লি। ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, মূলত কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েই এই ইস্যু। এটি বৃটিশ একটি কোম্পানির লাইসেন্সপ্রাপ্ত পণ্য যা ভারতে উৎপাদিত হয়েছে। এরইমধ্যে অনুরোধের কারণে এই ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ বৃটেনেও পাঠানো হয়েছে। তিনি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি না দেয়াকে বৈষম্যমূলক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, বৃটেনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এতে যদি ভারত সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তারাও পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার রাখে। জয়রাম রামেশ নামের আরেক সংসদ সদস্য এই নিয়মকে বর্ণবাদী আচরণ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, পুরো ব্যাপারটাই আসলে চরম অযৌক্তিক। প্রথমত, এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ফর্মুলা বৃটেনেই তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতে তৈরি করার পর সেই ভ্যাকসিন বৃটেনসহ বহু দেশে পাঠানো হয়েছে। বৃটেন তাদের অন্তত ৫০ লাখ নাগরিককে ভারতে নির্মিত সেই ভ্যাকসিন দিয়েছে। মেইড ইন ইন্ডিয়া কোভিশিল্ড বৃটেনে দেয়া হলে ক্ষতি নেই, অথচ একই জিনিস ভারতে দিলে মানা যাবে না- এটা কী ধরনের যুক্তি? ভারতীয় বিরোধীদলীয় নেতা শশী থারুর জানান, এই নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি বৃটেনে একটি বই লঞ্চ করার সফর বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, পুরোপুরি ভ্যাকসিন গ্রহণ করা ভারতীয়দের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা অপমানজনক।
ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস অ্যান্ড অ্যালামনি ইউনিয়ন বা এনআইএসএইউ’র পৃষ্ঠপোষক শশী থারুর। কোভিশিল্ডকে স্বীকৃতি দেয়ার পর এনআইএসএইউ’র প্রধান সানাম অরোরা বলেন, কোভিশিল্ডকে বৃটিশ সরকার স্বীকৃতি দেয়ায় আনন্দিত।
তবে কোভিশিল্ডকে অনুমোদন দেয়ার পরেও এখনো ভারতীয় ভ্রমণকারীরা দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন। কারণ ভ্রমণ নির্দেশনা আপডেট হলেও এখনো অনুমোদিত ১৭ দেশের তালিকায় ভারতের নাম নেই। গতকাল বুধবার বৃটেনের হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তারা এখনো এটি নিশ্চিত করতে পারছে না এবং এর জন্য আরো সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও নতুন নির্দেশনায় বলা আছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাক্সজেভ্রিয়া এবং মডার্না টাকেডা অনুমোদিত ভ্যাকসিনের যোগ্যতা অর্জন করেছে।
এদিকে, দ্য উইকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ৪ঠা অক্টোবর থেকে কার্যকর হতে চলা বৃটেনের নতুন নিয়মে কোভিশিল্ড গ্রহণ না করা ভারতীয়দের ওপর কড়াকড়ি থাকছেই। অর্থাৎ, যেসব ভারতীয় কোভিশিল্ড ছাড়া অন্য ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদেরকেও বৃটেন গেলে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানতে হবে। একইসঙ্গে যারা কোনো ভ্যাকসিনই গ্রহণ করেননি তাদেরকেও একই নিয়ম মানতে হবে। এসব নিয়মের মধ্যে রয়েছে, বৃটেনে প্রবেশের ৩ দিন আগেই কোভিড পরীক্ষা করতে হবে। এরপর বৃটেনে পৌঁছানোর পরে আরও দুটি পরীক্ষার জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এরপর বৃটেনে প্রবেশের পর ১০ দিনের সেলফ-আইসোলেশনতো আছেই। যদিও ‘টেস্ট টু রিলিজ’ অপশন রাখা হয়েছে। যার অধীনে নেগেটিভ পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে এই ১০ দিনের আইসোলেশনের সময় কমিয়ে আনা যাবে।
উল্লেখ্য যে, ভারত সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করে চলেছে যাতে করে দেশটির ভ্যাকসিন সনদপত্র সেসব দেশে স্বীকৃতি পায়।