দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের মধ্যেই বা এর পর বিএনপির শূন্যপদগুলো পূরণের চিন্তাভাবনা চলছে। কয়েক মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। মৃত্যু ও রাজনীতি থেকে অব্যাহতির কারণে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু পদ খালি আছে। এসব পদ পূরণে চমক থাকতে পারে। সম্প্রতি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকে এসব পদ পূরণের দাবি ওঠে। এর পরই মূলত এ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। এর আগেও কয়েকবার শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়েছিল।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনেকে মনে করেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সরকারের বাকি সময়ে রাজনৈতিক নানা কর্মসূচিতে দলের ব্যস্ততা বাড়তে থাকবে। কয়েক মাস পর আন্দোলনও গতি পাবে। এমন বাস্তবতায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের পরামর্শ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিরিজ বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি চাইলে নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করতে পারেন। কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারেন। এটা তার এখতিয়ার। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, শীর্ষনেতা চাইলে যে কেনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গঠনতন্ত্র তাকে সে ক্ষমতা দিয়েছে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ কাউন্সিলের পর স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হলেও তখন দুটি পদ খালি ছিল। এর পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ এবং এমকে আনোয়ারের মৃত্যুতে আরও চারটি পদ শূন্য হয়। ২০১৯ সালের ২২ জুন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং সেলিমা রহমানকে নিয়োগ দিয়ে দুটি পদ পূরণ করা হয়। এখনো চারটি পদ শূন্য। মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করলেও দল তার পদত্যাগপত্র এখনো গ্রহণ করেনি। রফিকুল ইসলাম মিয়া শয্যাশায়ী। ভারতে আটকে আছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
জানা গেছে, খালি পদ পূরণের পাশাপাশি স্থায়ী কমিটিতে কয়েকটি পরিবর্তনও হতে পারে। এসব পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহী ডজনখানেক নেতা। মৃত্যু ও পদত্যাগের কারণে ভাইস চেয়ারম্যানের ১১টি পদ শূন্য। ছাত্রবিষয়ক ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও খালি। এসব পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।
দলের একটি সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তাই দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারী নেত্রীদের একটি খসড়া তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ধীরে ধীরে দলে ‘এক নেতার এক পদ’ কার্যকর করা হচ্ছে। আগামীতে বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন হলে আরও বেশ কিছু পদ শূন্য হবে। আবার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হলে সেখানেও কোনো কোনো নেতা স্থান পেলে আরও কিছু পদ শূন্য হবে। স্থায়ী কমিটিতে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরিশাল বিভাগ থেকে হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জহির উদ্দিন স্বপন, খুলনা বিভাগ থেকে নিতাই রায় চৌধুরী ও শামসুজ্জামান দুদু, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের নামও আলোচনায় আছে।
ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি ছেড়েছেন। মারা গেছেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, রাবেয়া চৌধুরী, আবদুল মান্নান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী ও আমীনুল হক। সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পদোন্নতি পেয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছে। এ অবস্থায় ৩৫টির মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ১১টি শূন্য। এসব পদের বিপরীতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আতাউর রহমান ঢালী, তাজমেরী এস ইসলাম ও শাহেদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বাণিজ্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আহম্মেদ, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনের নাম আলোচনায় আছে।
রুহুল কবির রিজভী স্থায়ী কমিটির সদস্য হলে দপ্তরের দায়িত্বে যুগ্ম মহাসচিব হতে পারেন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এমরান সালেহ প্রিন্স অথবা এবিএম মোশাররফ হোসেন। যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে শামা ওবায়েদকেও দেখা যেতে পারে। ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলার দায়িত্বে থাকায় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলকে সম্প্রতি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তার স্থলে নিপুণ রায় চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে রফিকুল ইসলাম বকুল ও বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের নাম আলোচনায় রয়েছে। নির্বাহী কমিটির ৭টি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা নেতারা হলেন কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক মনির খান, সহঅর্থনৈতিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল।
দলীয় সূত্র জানায়, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পদোন্নতি হলে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম কিংবা সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর পদোন্নতিতে ভাগ্য খুলতে পারে আবদুল খালেক অথবা ফরহাদ হোসেন আজাদের। এ ছাড়া পদোন্নতি হলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর স্থলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিলকিস জাহান শিরীনের স্থলে আকন কুদ্দুসুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন।
নির্বাহী কমিটির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, গবেষণা সম্পাদক আবু সাইদ খোকন, ধর্ম সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সম্পাদক মোজাফফর হোসেন মারা গেছেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আহসান উল্লাহ হাসান, আবুল কাশেম চৌধুরী, এএফএম ইকবাল, মোজাহার হোসেন, মোজাহার আলী প্রধান, কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিশ, সরোয়ার আজম খান, কাজী আনোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, চমন আরা, এমএম মতিন, এমএ মজিদ, মিয়া মোহাম্মদ সেলিম, কাজী সেকান্দার আলী ডালিম প্রমুখ।