রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

মানসিক সমস্যায় দেশের ৪২ ভাগ শিক্ষার্থী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৪৬ বার

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। দেশে গত মার্চে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর হার ছিল ৩৬ শতাংশ। আগস্টে এ হার বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি আচরণগত পরিবর্তনও প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছে তাদের যথাযথ সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

করোনা মহামারীর কারণে দেশব্যাপী প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দেশের গ্রামে ও শহরের বস্তি এলাকায় করা একটি জরিপে দেখা গেছে, কমপক্ষে ২২ শতাংশ প্রাথমিক এবং ৩০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা স্কুল বন্ধ থাকায় লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘কোভিড-১৯ লিভলিহুড অ্যান্ড রিকভারি

প্যানেল সার্ভে’র অংশ হিসেবে এ জরিপ চালানো হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল ২০২১ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষাজীবনে কী কী পরিবর্তন এসেছে তা জানা।

জরিপে দেখা গেছে, মহামারী এবং এর ফলে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। চলতি বছরের আগস্টে ১৫ শতাংশেরও বেশি পরিবার জানিয়েছে মহামারীর শুরু থেকেই স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপে ভুগছে। মা-বাবারা জানিয়েছেন, স্কুল বন্ধ থাকাকালীন সন্তানদের আচরণ তুলনামূলক বেশি অসহনশীল, খিটমিটে এবং রাগান্বিত ছিল। জরিপের ফল বলছে, এ হার মার্চে ৩৬ শতাংশ থাকলেও আগস্টে তা বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়ায়।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন সম্প্রতি গবেষণার ফল প্রকাশ করেন। হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, করোনায় আর্থিক ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মতো মানবসম্পদের সংকটও গুরুত্বপূর্ণ। পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছাড়া শুধু স্কুল খুললে লার্নিং লস এবং ঝরেপড়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করা যাবে না।

আর ইমরান মতিন মনে করেন, ‘শিক্ষা খাতে জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা দরকার। লার্নিং লস বা শিখন ঘাটতি এবং মানসিক চাপ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনকার অবস্থাকে জরুরি হিসেবে না দেখলে দীর্ঘমেয়াদে আগামী বছরগুলোর উন্নয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’

এদিকে ২০১৮-১৯ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড পরিস্থিতির কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য শুধু কোভিডকালে নয়, বরং সব সময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সক্রিয় জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, সামাজিক সম্প্রীতি, গণপরিসরগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে সীমাবদ্ধ না থেকে সবার প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতকরণ, আবাসনগুলো এমনভাবে তৈরি করা যেন খেলাধুলার জন্য যথেষ্ট পরিসর পাওয়া যায় ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গেলে মন খুলে কথা জরুরি এবং এ জন্য প্রয়োজন বন্ধু। বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে খেলাধুলার জায়গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুনাফাভিত্তিক চিন্তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের আতঙ্কে খেলাধুলা পরিহার না করে বরং কোন খেলাগুলো শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই খেলা যেতে পারে তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনাকালীন সবার মধ্যেই মানসিক সমস্যা বেড়েছে। সারা বিশ্বেই একই চিত্র। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সংকট দুভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এক, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সংকট বেড়েছে, অন্যদিকে পরিবারের অভিভাবকদের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া অনলাইন ক্লাস এক ধরনের চাপ তৈরি করেছে। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তারা একাকিত্বে ভুগছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ পরিবারই একক পরিবার। এসব শিশুদের সমস্যাগুলো আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ ধরনের সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে।’

এ থেকে উত্তরণে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির গুরুত্বারোপ করে ডা. হেলাল বলেন, ‘তাদের পড়ালেখার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। স্কুলে ফিরে যাওয়ার পর দেড় বছরের পড়া দেড় মাসে শেষ করার চাপ সামলাতে তারা যেন হাবুডুবু না খায় সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে খেলাধুলা, সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। শিখন ঘাটতি পূরণে অধিক মনোযোগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বিকাশের পথ সুগম করতে হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com