বাংলাদেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তরাই বেশি করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের রোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দু’টি রোগ ছাড়াও ফুসফুসজনিত নানা রোগ, হৃদরোগ ও কিডনিজনিত রোগীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের রোগ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তদের প্রায় সবাই দীর্ঘ দিন থেকে কোনো না কোনো রোগে ভুগছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে খুব কম সংখ্যকেরই আগে থেকে কোনো ক্রনিক রোগ ছিল না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা আক্রান্তদের নিয়ে সাপ্তাহিক রোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে (১৫ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত) দেশে মোট এক হাজার ৫৮৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ৩১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই এক হাজার ৫৮৭ জনের মধ্যে ৫৬.৩ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন ৫০ শতাংশ (এদের আবার অনেকেই ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন)। ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ছিলেন ২৫ শতাংশ, হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন ১৮.৮ শতাংশ এবং কিডনি জটিলতা ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ করোনা আক্রান্ত।
করোনা আক্রান্তরা অন্য যেসব রোগে আক্রান্ত ছিলেন; তা হলো লিভার (৬.৩ শতাংশ), নিউরোলজিক্যাল সমস্যা ৬.৩ শতাংশ, থাইরয়েডজনিত সমস্যা ৬.৩ শতাংশ। বাংলাদেশে বেশির ভাগ করোনা আক্রান্তই ৪০ অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সী। সাধারণত এই বয়সী মানুষই বেশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অসাবধানতাবশত শরীরে যতœ নেয় না। তা ছাড়া ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে একটি ধারণা থাকে যে তারা বেশ শক্তিশালী, ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। তাদের ডায়াবেটিস অথবা উচ্চ রক্তচাপের মতো কোনো রোগ হতে পারে না। এসব রোগ হবে বৃদ্ধদের মধ্যে। কিন্তু কারো কারো দেহে ৩০ বছর পরই পরই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেই তখন চিকিৎসকের কাছে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩৫.৫ শতাংশ করোনার রোগী ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী। ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী করোনার রোগীদের আক্রান্তের হার ছিল ২২.৬ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১২.৯ শতাংশ হারে। অন্য দিকে ১২.৯ শতাংশের বয়স ছিল ৭১ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত। ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে। অন্য দিকে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরাও সাড়ে ৬ শতাংশ হারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী অনেক বেশি কিন্তু তারা সংখ্যায় কম আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো এদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। আবার ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সীরাও সাড়ে ৬ শতাংশ হারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হলো- এই বয়সী মানুষের বাংলাদেশে তুলনামূলক কম। বাংলাদেশে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে।
গত ১৫ থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে যে ৩১ জন মানুষ মারা গেছেন এদের মধ্যে ২৮ জন কোনো ধরনের টিকা নেননি। অবশিষ্ট তিনজন টিকা নেয়ার পরও মারা যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদের একজন এক ডোজ টিকা পেয়েছিলেন এবং অপর দু’জন দুই ডোজ টিকাই পেয়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইদানীং দুই ডোজ টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ও এফডিএ দুই ডোজ টিকাপ্রাপ্তদের বুস্টার ডোজ দেয়ার পরামর্শ অনুমোদন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বুস্টার ডোজের কোনো চিন্তাভাবনা করাই হচ্ছে না; কারণ এখানে অল্পসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে এবং অবশিষ্টরা টিকার বাইরে রয়েছে।
বাংলাদশে মোট ২৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এই রোগে মারা গেছেন দু’জন। গত রোববার সকাল ৮টার পর থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৮টার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ১৮ হাজার ৬১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা সবচেয়ে বেশি করা হয় রাজধানী ঢাকা শহরে। ১৩ হাজার ১২৭টি এবং রাজধানীতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৭ জন।