চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৮ জুলাই পবিত্র হজ। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি যেতে পারবেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। অবশ্য সৌদি আরবের কয়েকটি গণমাধ্যম ও বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে আগামী বছর বিদেশি হজযাত্রীদের সুযোগ দেবে সৌদি সরকার। কারণ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী কোভিড ১৯-এর দাপট অনেকটাই কমে এসেছে। অন্যদিকে করোনার টিকাও পাচ্ছেন মানুষ। ফলে হজযাত্রীদের টিকা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে বড়পরিসরে হজের দরজা খুলবে এবার। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে হজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বাংলাদেশ সরকার। এ নিয়ে গত রবিবার অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ গমনেচ্ছুদের জন্য টিকা কেনাসহ ১৪টি বিষয়ে আলোচনা হয় ওই সভায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের হজে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন বাংলাদেশে সম্পন্নের জন্য ‘রুট টু মক্কা’ চালু করা হয়। আগামী বছরে হজের জন্যও একই পদক্ষেপ নেওয়ার আভাস দিয়েছে সরকার। তবে ২০১৯ সালের হজযাত্রীদের মাত্র ৪৫ শতাংশের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন করা হলেও আসন্ন হজে শতভাগ করার ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সৌদি সরকার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সভায় জানানো হয়, ই-পাসপোর্টের তথ্যাদি যাছাইয়ে আন্তঃসংযোগ স্থাপিত হয়নি এখনো। সেটি করতে একাধিক মাস সময় লাগতে পারে। তাই এখন থেকে কাজ শুরু না করলে সময়মতো সিস্টেমে তথ্য না পাওয়ার আশঙ্কার কথা ওঠে আসে বৈঠকে। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ই-হজ সিস্টেমের বিদ্যমান অবস্থায় এমআরপি পাসপোর্টের পাশাপাশি ‘ই-পাসপোর্টের’ তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ে আন্তঃসংযোগ স্থাপন জরুরি। প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে হজে ইলেকট্রনিক হেলথ প্রোফাইল চালু হয়। এই সিস্টেমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস টিকার সঙ্গে কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনপুট করতেও আন্তঃসংযোগ হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে হজযাত্রীরা যেন সহজে পাসপোর্ট পান সে জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক বিশেষ বুথ খোলার বিষয়টিও ভাবছে সরকার। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালে হজের জন্য তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু আগামী বছর সম্ভাব্য ব্যয় অনুপাতে হজ প্যাকেজ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানা গেছে। এরই মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও মেনিনজাইটিস টিকা কিনতে হজযাত্রীর সংখ্যা চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে জানা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৭২ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধিতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৫ জন। প্রাক-নিবন্ধন অবশ্য এখনো চলছে। এ ছাড়া সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৬৩১ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনা ৫২ হাজার ২৩২ জনের আগেই নিবন্ধন করা আছে। তাদের মধ্যে বহু হজযাত্রী স্বেচ্ছায় নিবন্ধন বাতিল করেছেন। ফলে এই সংখ্যা দিন দিন কমছে। নিবন্ধন কার্যক্রম ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের হজ চুক্তির পর কোটার ভিত্তিতে পুনরায় নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করবে সরকার।
কর্মকর্তারা জানান, সৌদি আরব হজের অনুমতি দিলেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া নিবন্ধন, পিআইডি, প্রশিক্ষণ, টিকা, ফ্লাইট, ভিসাসংক্রান্ত, ইলেকট্রনিক হেলথ প্রোফাইল, হজযাত্রীদের আবাসন, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, রিপ্লেসমেন্ট, হজযাত্রী ট্রান্সফার, এজেন্সির কার্যক্রম মনিটরিং ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য বিষয় সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের পর শুরু করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।