পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শহিদুল ইসলামের একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। ছবিটি ঘিরে শুরু হয় নানা সমালোচনা। ছবিতে দেখা যায় দুই হাত ওপরের দিকে তুলে উইকেট পাওয়ার আনন্দ উদ্যাপন করছেন বাংলাদেশ দলের পেসার শহীদুল ইসলাম। আদৌতে সেটি শহীদুলের ছবি নয়। ছবিটা আসলে ছিল সাকিব আল হাসানের। সাকিবের মাথার জায়গায় শহীদুলের মাথা বসিয়ে পোস্ট করা হয়।
এরকম একটা ঘটনার জন্য নেটিজেনদের কাঠগড়ায় দাঁড়ায় বিসিবি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হয়েও এমন গোঁজামিল দেওয়া একটা ছবি তারা কীভাবে পোস্ট করল তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে? পরে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। তবে বিসিবি সরাসরি নয়, তাদের হয়ে কাজটা করেছে কনটেন্ট ম্যাটারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। গত চার বছর তাদের কাছেই ছিল বিসিবির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ এবং টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রচারস্বত্ব। তবে লোকবলের অভাবে কনটেন্ট ম্যাটারস আবার এ কাজগুলো নিজেরা করত না, করাত বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে। সাকিবের ছবিতে শহীদুলের মাথা বসানোর কাণ্ডটা ঘটিয়েছে তারাই।
তবে দায়টা শেষ পর্যন্ত বিসিবিকেই নিতে হবে। নিজেদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কী যাচ্ছে না যাচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করার কোনো উদ্যোগই যে নেই তাদের! আরেক পক্ষের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েই যেন সব কাজ শেষ। এসব ক্ষেত্রে যেকোনো বিষয়েই বিসিবিতে যোগাযোগের একমাত্র ব্যক্তি মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম। কিন্তু অন্য কাজের ব্যস্ততার কারণে তার পক্ষেও সব সময় সম্ভব হয় না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখা।
সূত্র জানিয়েছে, কনটেন্ট ম্যাটারস বিসিবির ফেসবুক পেজের পোস্টগুলোর জন্য যে পৃষ্ঠপোষকতা নিয়েছে, তাদের শর্ত ছিল খেলার সময় প্রতিদিন অন্তত ১০টি পোস্ট দিতে হবে। মূলত সেই ১০টি পোস্টের ‘কোটা’ পূরণ করতেই নাকি সংশ্লিষ্টরা ও রকম গোঁজামিল দেওয়া ছবি পোস্ট দিয়েছেন!
যদিও এ যুক্তি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, শহীদুলের উইকেট পাওয়ার পোস্টটি তার আসল ছবি দিয়েও দেওয়া যেত। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে বিসিবির কাছ থেকে সময়মতো ছবি পাওয়া যায় না, এমন অভিযোগও আছে।
ঘটনার পর প্রবল সমালোচনার মুখে গত বৃহস্পতিবার বিসিবি কনটেন্ট ম্যাটারসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি বাতিল করেছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘ছবি নিয়ে যেটা হয়েছে, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা কনটেন্ট ম্যাটারসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছি। চলতি চট্টগ্রাম টেস্টের পর আর তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। বিসিবি অচিরেই ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রির নতুন দরপত্র আহ্বান করবে।’
তার আগপর্যন্ত বিসিবি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কনটেন্ট ম্যাটারসের সঙ্গে বিসিবির তিন বছরের চুক্তি আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০২০ সালের নভেম্বর মাসেই। এরপরও বিসিবির মৌখিক অনুরোধের ভিত্তিতে কনটেন্ট ম্যাটারস গত এক বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের যাবতীয় কাজ করে আসছে।
বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বর্তমানে ফলোয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৩৪ লাখের ওপরে। বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত ফেসবুক পেজগুলোর মধ্যে এটি আছে পঞ্চম স্থানে। বিসিবির টুইটার অ্যাকাউন্টেও ফলোয়ার আছে ২৯ লাখের বেশি। প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে আয়ের বড় উৎস হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই জায়গাটি এখনো অবহেলিতই রয়ে গেছে।