হামলার জন্য ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৭ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন শাহবাগ থানায় এই অভিযোগ নিয়ে যান।
তিনি মামলা করতে চাইলেও একই ঘটনায় ইতোমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করায় ওই মামলার সঙ্গেই নূরের অভিযোগের তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আবুল হাসান।
গত রোববার ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে হামলার শিকার হন ভিপি নূর ও তার সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একদল নেতা-কর্মী।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীরা ওই হামলা চালায়। তবে ছাত্রলীগ এই ঘটনায় নিজেদের দায় অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চকেই দুষছে।
হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন নূরের পক্ষে মামলা করতে মঙ্গলবার থানায় যান পরিষদ থেকে ডাকসুতে নির্বাচিত সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার। অভিযোগে বলা হয়, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে সেদিন হামলা হয়েছিল।
হামলায় আহত নুরুল হক নূর। নূর বলছেন, ওই দিন বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ অতির্কিতে ডাকসু ভবনে ঢুকে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের উপর প্রথম দফা হামলা চালায়। তখন তারা ডাকসুর কর্মচারীদের সহায়তায় ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
‘কিছুক্ষণ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মূল ফটকের তালা খুলে হত্যার উদ্দ্যেশে হামলা চালায়।’
হামলাকারীরা কক্ষের বাতি নিভিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা চালিয়েছিল বলে নূরের অভিযোগে বলা হয়।
হামলায় আহতদের মধ্যে ২৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। এখন নূরসহ পাঁচজন ভর্তি রয়েছেন।
সনজিত-সাদ্দাম ছাড়া আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এ এস এস আল সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তুর্য, সূর্যসেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ তানিন, এফ রহমান হলের ভিপি আব্দুর আলীম খান, বিজয় একাত্তর হলের এজিএস আবু ইউনুস, ডাকসু সদস্য রাকিবুল হাসান ঐতিহ্য, মাহমুদুল হাসান, ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রবিউল হোসেন রানা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ সম্পাদক নিয়ামত উল্লাহ তপন, জিয়া হল সংসদের জিএস হাসিবুল হাসান শান্ত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক সিফাতুজ্জামান খান, মহসীন হল ছাত্র সংসদের জিএস মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম, এফ রহমান হলের জিএস আব্দুর রহিম সরকার, এফ রহমান হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক তানজিল ইমরান তালাপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাবু, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার, ইবনুল হাসান উজ্জল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ স্কুল বিষয়ক সম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, এস এম হল ছাত্রলীগের নেতা খান মিলন হোসেন নিরব, কবি জসিমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গণশিক্ষা সম্পাদক হৃদয় হাসান সোহাগ, চারুকলা ছাত্রলীগের উজ্জল, আরিফুল ইসলাম, মুক্তযুদ্ধ মঞ্চের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা রিপা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের (জামাল গ্রুপ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম মাহবুব, মেহেদী হাসান নিবিড়, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্র সংসদের জিএস মেহেদী হাসান শান্ত, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি জীবন রায়।
হামলায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সাদ্দাম সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সংঘর্ষ। ওই দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে তারা তা থামাতে গিয়েছিলেন।
ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী এক ফেইসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, সেদিন ছাত্রলীগ নেতারা নূরকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন।
নূরের সহকর্মী ডাকসুর সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার বলেন, নূর অসুস্থ থাকায় তিনি অভিযোগ নিয়ে থানায় দিয়েছেন।
এদিকে নূর মামলা করার আগেই সোমবার মধ্যরাতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রইচ হোসেনের করা ওই মামলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নূরকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
ওই মামলার আসামিরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এএসএম আল সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত তূর্য, এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব হাসান নিলয় এবং জিয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মাহিম।
এই আটজনের পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৩৫ জনকে মামলার এজাহারে আসামি করা হয় বলে জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান।
আল মামুন ও তূর্যকে সোমবার দুপুরে শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।