বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

আদালত অঙ্গনে আলোচনায় ছিল খালেদা জিয়ার জামিন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩০১ বার

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন কি না- আদালত অঙ্গনে বছরজুড়ে এ আলোচনা ছিল। ২০১৯ সালজুড়েই আইনজীবী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছিল খালেদা জিয়া হাইকোর্ট এবং সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জামিন পাচ্ছেন কি না? তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং একজন বয়স্ক মহিলা, দীর্ঘ দিন কারাগারে থেকে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তার জামিন প্রয়োজন, এই বিবেচনায় তাকে জামিন দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানান আইনজীবীরা। তবে বছরের শেষে এসে গত ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মেডিক্যাল রিপোর্ট কল করার পর শুনানি নিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এর আগে হাইকোর্টও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার নথিপত্র তলব করে উভয় পক্ষে শুনানি শেষে গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তার জামিনের জন্য বছরজুড়ে উচ্চ আদালতে আমরা আইনি লড়াই চালিয়েছি। কিন্তু সাত বছরের সাজায় তার জামিন নামঞ্জুর করা হলো, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। হাইকোর্ট সাত বছরের সাজার এই মামলায় জামিন নামঞ্জুর করায় আমরা লজ্জাবোধ করছি। এর মধ্যে তিনি দেড় বছর সাজা খেটেছেন। এ অবস্থাতেও যে তার জামিন আবেদন সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করবেন, তা নজিরবিহীন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও এ ধরনের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়ার নজির নেই।

ওইদিন শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন চাইছি। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। রিপোর্ট আছে, তিনি হাত ও পা নাড়াতে পারছেন না। তার অবস্থা পঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া সুস্থ মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখলাম, তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই ছয় মাস চিকিৎসার পরও তার এই অবস্থা। আর ছয় মাস পর হয়তো তিনি লাশ হয়ে বের হবেন। আমরা সর্বোচ্চ এই আদালতের পর আর কোথাও যেতে পারব না। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে তার জামিন আবেদন করেছি। আমাদের বলার আর জায়গা নেই।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তার (খালেদা জিয়া) এক মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়েছে। অন্য মামলায় সাত বছর হয়েছে। সব মিলে তার ১৭ বছর সাজা। তারা আবেদনে বলেছেনÑ ১৯৯৭ সালে একবার ও ২০০২ সালে একবার হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি। তাহলে তো ন্যাচারালি তার হাঁটা রেস্টিকটেড হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় যেমন দ্রুত আপিল শুনানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটাতেও দিতে পারেন।

এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগে হট্টগোল হইচই হয়। ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়ার মেডিকথ্যাল রিপোর্ট আসেনি উল্লেখ করে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি পেছানোর আবেদন করলে আপিল বিভাগ পরবর্তী শুনানির জনথ্য ১২ ডিসেম্বর ধার্য করেন। এরপর বিএনপি ও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে এজলাস ছেড়ে চলে যান প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিরা। এরপর আবারো আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদনের শুনানি করার অনুরোধ জানান। তাতে সাড়া না পেয়ে আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে সেøাগান দিতে থাকেন। সকাল থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আইনজীবীরা একই সেøাগান দিতে থাকলে ওইদিন আদালতে অন্যকোনো মামলার শুনানি হয়নি। তবে আদালতে আইনজীবীদের হট্টগোল হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।

গত ২৮ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট তলব করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করে দুদক। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও খালেদা জিয়ার জামিন নিতে হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, সেসব মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন বলে আইনজীবীরা জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com