করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে বৈদেশিক ব্যবসা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ছাড়ে এবার পরিচালন মুনাফায় চমক দেখিয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। করোনার কারণে ২০২০ সালে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমলেও সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে মুনাফায় ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি- সব খাতের ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ছাড়ের কারণে অনেক ব্যাংকের সুদ আদায় বেড়েছে। আবার পরিচালন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি আমানতের সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার সুফলও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্সের কমিশন থেকেও ভালো আয় হয়েছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজার থেকে পাওয়া মুনাফার প্রভাব বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রতিফলিত হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের এমডি মো. এমরানুল হক আমাদের সময়কে বলেন, এবার খেলাপি ঋণ আদায় অনেক বেড়েছে। অর্থনীতিতে গতি আসায় নন-ফান্ডেড ব্যবসা তথা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য থেকে আমাদের ভালো আয় হয়েছে। এ ছাড়া বছরের শেষ সময়ে এসে ঋণের কিস্তি পরিশোধে যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, ওই ছাড়ের কারণেও আমাদের সুদ আয় বেড়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধিনিষেধের কারণে অনিরীক্ষিত পরিচালন মুনাফা প্রকাশ করতে পারে না ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। তবে পরিচালন মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর যে অংশটুকু থাকে সেটিই প্রকৃত মুনাফা।
বিদায়ী বছরে যেসব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে তার মধ্যে সবার ওপরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সদ্যবিদায়ী ২০২১ সালে ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার মুনাফা করেছে ব্যাংকটি; ২০২০ সালে মুনাফা ছিল ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৯৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ শেষে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৮৭০ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৮৮১ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা; আগের বছর ছিল ৭৪১ কোটি টাকা। আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফ হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৬৮০ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৭২৩ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৫২১ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭১৭ কোটি টাকা; গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৭১৭ কোটি টাকা; ২০২০ সাল শেষে ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক ২০২১ সাল শেষে মুনাফা করে ৭৫০ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের মুনাফা ব্যাপক কমেছে। ব্যাংকটি ২০২১ সালে মুনাফা করেছে মাত্র ২৪৮ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৯২০ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা; ২০২০ সালে ছিল ৩২৩ কোটি টাকা। সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক মুনাফা করেছে ২১০ কোটি টাকা; গত বছর করে ১৫২ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১২৩ কোটি; গত বছর ছিল ৯৪ কোটি টাকা। মেঘনা ব্য্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা; গত বছর ছিল ৭৩ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৬২ কোটি টাকা; যা গত বছর ছিল ১২৫ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা; ২০২০ সাল শেষে মুনাফা করে ৩১৭ কোটি টাকা।
২০২১ সালের রাষ্ট্র্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও ভালো মুনাফা করেছে। সোনালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ২০৭ কোটি টাকা; এক বছর আগে ছিল ২ হাজার ১৫৪ কোটি। রূপালী ব্যাংকের মুনাফা ১৫০ কোটি টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১৫৯ কোটি টাকা।