বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কলকাতায় বাংলাদেশি কনস্যুলেট ঘেরাওয়ের চেষ্টা, সংঘর্ষে আহত পুলিশ চলমান অস্থিরতার পেছনে ‘উদ্দেশ্যমূলক ইন্ধন’ দেখছে সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই যাবে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে : জামায়াত আমির বিচারপতিকে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনায় প্রধান বিচারপতির উদ্বেগ ইসরাইলের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা হিজবুল্লাহর বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদির সাথে কথা বলেছেন জয়শঙ্কর ইসকন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানে সরকার : হাইকোর্টকে রাষ্ট্রপক্ষ আইনজীবী সাইফুল হত্যা : সরাসরি জড়িত ৮, শনাক্ত ১৩ র‍্যাবের সাবেক ২ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছেলেসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ

২০ খেলাপির কাছে আটকা ২২ হাজার কোটি টাকা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৮৭ বার

শীর্ষ খেলাপিদের কাছে এক রকম জিম্মি হয়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক আটকে আছে শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে। আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ২১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ শতাংশই জনতা ব্যাংকের। আবার এসব খেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের হারও নগণ্য। এর বাইরে অন্য খেলাপিদের কাছ থেকেও আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণের নামে এসব অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় এসব খেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ও করা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর মামলা চললেও বাস্তব অগ্রগতি তেমন নেই।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, শাস্তি হয় না বলেই শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে অর্থ ফেরত না দেওয়ার প্র্রবণতা বেশি। তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা হলেও দীর্ঘসূত্রতায় বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। আবার সরকারের পক্ষ থেকেও ঋণখেলাপিদের বারবার সুবিধা দেওয়া হয়। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে না গেলে খেলাপি ঋণ কমবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি ও নিয়মিত তদারকির স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকেও কয়েক বছর ধরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) আওতায় বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএ স্বাক্ষরের পর গত মাসে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর সেপ্টেম্বরভিত্তিক বিভিন্ন আর্থিক সূচকের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়। এতে দেখা যায়, শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা আটকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা আটকে আছে সোনালী ব্যাংকের। রূপালী ব্যাংকের আটকে আছে ২ হাজার ৬৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। অগ্রণী ব্যাংকের আটকে আছে ২ হাজার ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংকের আটকে আছে ২ হাজার ৩২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৩১৪ কোটি টাকা আটকে আছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল)।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ২০১৯ সালে খেলাপিদের যে গণছাড় দেওয়া হয়, সেই সুযোগ খেলাপিদের অনেকেই কাজে লাগাননি। এ কারণে তাদের কাছে আটকে থাকা ঋণের পুঞ্জীভূত স্থিতি সেভাবে কমেনি। আবার করোনার কারণেও খেলাপি ঋণ ফেরত এসেছে কম। তবে খেলাপিদের থেকে অর্থ আদায়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে। যে কারণে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের হার তুলনামূলক ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে এই ছয় ব্যাংকের ঋণ আদায়ের হারও নগণ্য। এর মধ্যে চারটি ব্যাংকের আদায়ের হার ১ শতাংশেরও কম। বেসিক ব্যাংকের আদায়ের হার ছিল দশমিক ০১ শতাংশ। বিডিবিএলের দশমিক ১৮, সোনালী ব্যাংকে দশমিক ৬৪, জনতা ব্যাংকের দশমিক ৮৩ ও রূপালী ব্যাংকের ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে অগ্রণী ব্যাংকের আদায়ের হার কিছুটা ভালো, ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

শুধু শীর্ষ ২০ খেলাপি নয়, সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের থেকেও ব্যাংকগুলোর অর্থ আদায়ের হার সন্তোষজনক নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে ২২ হাজার ৬২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ৬ হাজার ৬ কোটি, জনতা ব্যাংকে ৭ হাজার ২০০ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪০০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৭ হাজার ৮৭২ কোটি, বিডিবিএলকে ২০৬ কোটি ও বেসিক ব্যাংকে ৩৭৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রথম তিন মাসে সোনালী ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ১৩৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯ শতাংশ। জনতা ব্যাংক আদায় করতে পেরেছে ২৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার দশমিক ৩৫ শতাংশ। রূপালী ব্যাংক আদায় করতে সক্ষম হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ২ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের আদায় হয়েছে ১৭৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বিডিবিএলের আদায় হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংক আদায় করতে পেরেছে ৩৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

নানা ছাড় ও সুবিধা অব্যাহত রাখার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যায়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মানে ওই বছরের ৯ মাসের হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের বড় অংশই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে। এর পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com