মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১০৭ কোটি টাকার একটি স্পোর্টস ও জিমওয়্যার ব্র্যান্ডের মালিক হয়েছেন ইংল্যান্ডের বেন ফ্রান্সিস। তার স্পোর্টস ও জিমওয়্যার ব্র্যান্ড ‘জিমসার্ক’-এর বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। বেন ফ্রান্সিসের বয়স যখন ১৯ বছর, তখন নতুন একটি স্টার্টআপের চিন্তা মাথায় আসে। ব্যস, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড ‘জিমসার্ক’। এর পর অনেক কঠিন সময় পেরোতে হয়েছে তাকে। কারণ তিনি ২০১২ সালে বার্মিংহামের অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন। তখন পিৎজা হাটে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।
ওই সময়ের কথা মনে করে তিনি জানান, তাকে সকালে ঘুম থেকে উঠে ইউনিভার্সিটিতে যেতে হতো। এর পর পিৎজা হাটে যেতেন এবং পিৎজা ডেলিভারির ফাঁকে ফাঁকে ইমেইলের উত্তর দিতেন আর রাতে বাসায় ফিরে জিমসার্কের ওয়েবসাইটে নতুন পণ্য আপলোড করতেন। এর ২ বছর পর তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ পাউন্ডে দাঁড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা এবং পিৎজা হাটের খণ্ডকালীন চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে জিমসার্কে মনোনিবেশ করেন। এভাবে ২০১৮ সালে এসে তার ব্র্যান্ড ‘জিমসার্ক’ ১৩০টি দেশে ৭০ লাখ মানুষের প্রিয় স্পোর্টস ও জিমওয়্যার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।
কৈশোর থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটি বেন ফ্রান্সিসকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। একদম অল্প বয়সে সাহস করে প্রথমে একটি ওয়েবসাইট খোলেন। সেখানে গাড়ির লাইসেন্স প্লেট বিক্রি করা হতো। এর পর অন্য কিছু শুরু করার পরিকল্পনা করলেন। এসব থেকে উৎসাহী হয়ে এক সময় দুটি আইফোন ফিটনেস ট্র্যাকিং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও চালু করেছিলেন। এর মধ্যে একটি থেকে প্রায় ৮ হাজার পাউন্ড উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করবেন- যেখানে ফিটনেস সম্পর্কিত কোনো জিনিস কেনাবেচা করা হবে। মূলত ওই ধারণা থেকেই ‘জিমসার্ক’ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা তার মাথায় এসেছিল।
বেন বলেন, ‘আমি নিয়মিত জিমে যেতাম এবং ফিটনেসশিল্পে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখতাম।’ সিদ্ধান্ত নিলেন তার ওয়েবসাইটকে দুইভাগে বিভক্ত করবেন। হেলথ সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি তার ওয়েবসাইটে যুক্ত করবেন জিম ও স্পোর্টসওয়্যার। কিন্তু কাপড় তৈরির ব্যাপারে তার কোনো ধারণা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, যন্ত্রপাতি ও দক্ষ কর্মী- কিছুই ছিল না। তার দাদি পর্দা সেলাই করতেন এবং তিনিই তাকে প্রথমে সেলাই করা শেখান। সারাদিন ক্লাস ও পার্ট টাইম চাকরি করে প্রথম দিকে বেন একদিনে মাত্র ১০টি কাপড় সেলাই করতে পারতেন।
তিনি এ কথা স্বীকার করে জানান, যখন প্রথমে ‘জিমসার্ক’-এ হেলথ সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি স্পোর্টস ও জিমওয়্যার সংযুক্ত করেছিলেন, তখন এ ব্যবসায় থেকে বেশি কিছু আশা করেননি এবং এ নিয়ে তার তেমন কোনো বড় পরিকল্পনাও ছিল না। কিন্তু তার এই সাধারণ পরিকল্পনা এত বেশি প্রসারিত ও সফল হবে, তা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। এই প্রতিষ্ঠানের দ্রুত উন্নতির পেছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার ও প্রচারের বিশেষ কিছু কৌশল।
ব্যবসা শুরুর ৬ বছর পর বর্তমানে ‘জিমসার্ক’-এর ১.২ মিলিয়ন গ্রাহক এবং এর সদর দপ্তরে ২১৫ কর্মচারী রয়েছে। এ ছাড়া জিমসার্কের ইন্সটাগ্রামে ২.৪ মিলিয়ন ও ফেসবুকে ১.৫ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছেন।