বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়ষ্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। বুধবার অভিযোগপত্রের শুনানি শেষে রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যায় প্রত্যক্ষ জড়িত ও সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এবারও এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মেয়েকে নির্দোষ দাবি করেছেন মিন্নির পরিবার। মিন্নির বিরুদ্ধে রিফাত হত্যায় জড়িতের বিষয়ে আদালতের চার্জ গঠনের বিষয়ে শিগগিরই উচ্চাদালতের স্মরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন মিন্নির আইনজীবী। এদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে আসছি আমার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার। ঘটনার সময় মিন্নি নিজের জীবন বাজি রেখে রিফাতকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে। দুনিয়ার সবাই সেই ভিডিও দেখেছে। রিফাতের বাবা পরের দিন বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে যে মামলা দায়ের করে সেখানে আমার মেয়েকে একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গনেশ উল্টে গেল, আমার মেয়েকে সাক্ষী থেকে আসামি করা হলো, তারপরের সব ঘটনাই দেশবাসী দেখেছে। পুলিশের তদন্তে আমি সবসময়ই অনাস্থা জানিয়েছি। পুলিশ মামলটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে। সেই চার্জশিটের আলোকেই ৩২০ ধারায় মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ঢাকার আইনজীবীদের সাথে কথা বলেছি, আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে উচ্চাদালতের স্মরণাপন্ন হব।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, মামলায় মিন্নিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যায় মিন্নি সরাসরি জড়িত এমন অভিযোগ এনে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। মামলায় মিন্নিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে বলে বরাবরই আমরা দাবি করে আসছি। কারণ, মিন্নি এই মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন, তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতবভাবে আসামি করা হয়েছে। মিন্নির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের তার পরিবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা শিগগিরই উচ্চাদালতের যাবেন হবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
দেশের বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুর দুটার দিকে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ চার্জ গঠন করেন। একই সাথে এ মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে চার্জ গঠন উপলক্ষে এ মামলায় কারাগারে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক ৮ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। চার্জ গঠন শেষে কারাগারে থাকা ৮ আসামিকে আবারো কারাগারেই পাঠানো হয়।
যেসব আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে, তারা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯), কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।
এদের মধ্যে এক নম্বর থেকে সাত নম্বর অভিযুক্ত সাত জনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ৮ এবং ১০ নম্বর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে ২১২ এবং ১২০ বি ১ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়ছে। প্রাপ্তবয়স্ক ৯ নম্বর আসামির বিরুদ্ধে আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের অভিযোগপত্র চার্জ গঠনসহ বিচারের জন্য প্রস্তুত করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
গত ২৬ জুন বরগুনার সরকারী কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকা- সংগঠিত হয়। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এই দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক রয়েছেন। এছাড়া নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।