প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংকগুলো আগামী এপ্রিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)’র একটি প্রতিনিধিদল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।
প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর হাতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্টে ২২৫ কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে যা বলেছেন তা আমি পুনরায় বলতে চাই না। আশা করি সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার বাস্তবায়ন করা হবে। তা না হলে দেশে প্রত্যাশিত বিনিয়োগ হবে না এবং বিনিয়োগের ধারাও সংকটাপন্ন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা এর আগে যেসব দাবি করেছেন আমি তা পূরণ করেছি। কিন্তু আপনার আপনাদের কথা রাখেননি। আশা করি এবার অঙ্গীকারের ব্যতয় ঘটবে না। আপনারা তা বাস্তবায়ন করবেন।’
এর আগে বিএবি সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন তারা আগামী এপ্রিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হার বাস্তবায়ন করবেন।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর সরকার সকল খাত বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
তিনি বলেন, ‘সরকার একা দেশের উন্নয়ন করতে পারে না। এ লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।’
বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিতে গিয়ে তাঁর সরকারকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর তহবিল বন্ধে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের পক্ষ থেকে বাধা ছিল। তারা প্রশ্ন করেছিল দেশের অর্থনীতি যেহেতু অত বড় নয় সেক্ষেত্রে এতগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে কি হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সে সময় আমার উত্তর ছিল যে, এখন অর্থনীতি বড় নয়, কিন্তু একদিন এটি অনেক বড় হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম করতে তিনি অনেক লোককে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেন কেন? দেশের মানুষের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে মানুষ বিনিয়োগ করতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায় যাতে দেশকে পেছনে ফিরে তাকাতে না হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের অদম্য অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক। আমরা বাংলাদেশকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই, যেখান থেকে এটি আর কখনো মুখ থুবড়ে পড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালিরা বিশ্বের যে কোন জায়গায় গিয়ে গর্ব করে বলতে পারে, আমার দেশ বাংলাদেশ। আমরা বাঙালি, আমাদের মর্যাদা রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং বিজয় অর্জন করেছে। ‘আমরা একটি বিজয়ী জাতি এবং আমরা সবসময় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাই।’
ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কিছুই পাওয়ার নেই এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে তিনি গর্ববোধ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি আমার সকল কাজের প্রেরণা।’
১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, কেউ বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারবে না।’
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্টের অনুদান দেয়ার জন্য বিএবি’কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে মুজিব বর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন দিনও পার করতে হয়েছে যখন আমরা জাতির পিতার জন্মশত বর্ষ উদযাপনের কথা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এবং জনগণের সমর্থনে আমরা এটি উদযাপন করছি। আপনাদের অনুদান এ লক্ষ্যে কাজে লাগানো হবে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এবং তাঁর বোন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িসহ সবকিছু দেশের মানুষের জন্য দান করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্ট থেকে দুর্গত মানুষ ও মেধাবি শিক্ষার্থী এবং একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গকে অনুদান ও বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ ট্রাস্টের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও সুন্দর লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ‘আমরা ইতোমধ্যে এ লাইব্রেরির জন্য বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশে একটি বাড়ি কিনেছি। এই লাইব্রেরির মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম অনেক তথ্য জানতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপর গোপন গোয়েন্দা নথিপত্র-এর মতো বঙ্গবন্ধুর লিখিত বই পড়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কেউ এসব ঐতিহাসিক বই পড়লে জাতির পিতা, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।’
বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের ওপর শিগগিরই একটি বই প্রকাশিত হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বই লিখতে পারলে বঙ্গবন্ধু একজন ভালো সাহিত্যিক হতে পারতেন।’
এর আগে শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বিএবি’র প্রধান কার্যালয়ে ‘মুজিব কর্নার’ উদ্বোধন করেন।
বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, নতুন প্রজন্মের সামনে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে বিএবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মুজিব কর্নার স্থাপন করবে।
সূত্র : বাসস